ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের ফজলুর রহমান খান ফারুক পেলেন একুশে পদক

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৮:৩৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
টাঙ্গাইলের ফজলুর রহমান খান ফারুক পেলেন একুশে পদক

ফজলুর রহমান খান ফারুক

মুক্তিযদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক গ্রহণ করেছেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত থেকে মনোনীতদের হাতে পদক তুলে দেন।

ফজলুর রহমান খান ফারুকের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি টাঙ্গাইলে অবস্থান করে জেলার সব উপজেলার উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর।  টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মির্জাপুর আসনের সাবেক গণ পরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য।  মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসন থেকে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ এমপি ছিলেন ফজলুর রহমান খান ফারুক।

১৯৪৪ সালের ১২ অক্টোবর কহেলা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। বাবা প্রয়াত আব্দুল হালিম খান ও মা প্রয়াত ইয়াকুতুন্নেছা খানমের আট সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

তিনি রাজনীতির পাশাপাশি করেছেন সাংবাদিকতাও।  ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ও টাঙ্গাইল মহকুমা প্রেসক্লাব এবং টাঙ্গাইল মহকুমা মফস্বল সংবাদদাতা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।  এখন তার সম্পাদনায় টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে আজকের দেশবাসী নামে একটি দৈনিক পত্রিকা।  এছাড়া ফজলুর রহমান খান ফারুক মির্জাপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। 

এই বর্ষিয়ান নেতা টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এখনও দিনের বেশির ভাগ সময় আওয়ামী রাজনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন।

পারিবারিক সূত্র মতে, ফজলুর রহমান ফারুকের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ১৯৬০ সালে। সে সময় তিনি ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন।

তিনি ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় কারাবরণ করেন। সেই সঙ্গে টাঙ্গাইল করটিয়া সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হন।

এরপর ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে অং গ্রহণ করে কারাবরণ করেন।  ৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, ৬৮ সালে ১১ দফা আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটির সদস্য ৬৯ এর গণঅভ্যূথ্থানে অংশগ্রহণ এবং কারাবরণ করেন। ৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে টাঙ্গাইল জেলার ১০৭টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেন এবং টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।  একই বছর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন।

১৯৭১ এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর নিজ নির্বাচনী এলাকা মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে ছাত্র-যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং ঢাকার বাইরে ৩ এপ্রিল মির্জাপুরের গোড়ান-সাটিয়াচড়া প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।  ৭১ এর ১৮ এপ্রিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু দিয়ে ভারতে যান এবং ১১ নম্বর সেক্টরের তুরা মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং সেন্টারে পলিটিক্যাল মটিভেটরের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর মুজিব বাহিনী গঠন করা হলে টাঙ্গাইল জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকালে তদানীন্তন পাক সরকার তার অনুপস্থিতিতে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যপদ বাতিল করে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ৭২ সালে স্বাধীন দেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে সবচেয়ে কম বয়সে এমপি নির্বাচিত হন তিনি।  ৭৪ সালে দেশের উন্নয়নের জন্য জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠিত হলে টাঙ্গাইল জেলা বাকশাল এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।  ৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে  অংশগ্রহণ করে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন তিনি।  ৮৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রথম টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ২০১৫ সালের ১৭ আক্টাবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।  ৮৬ ও ৯১ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

২০১১ সালে ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রশাসক নির্বাচিত হন।  ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি মির্জাপুর প্রেসক্লাবেরও আজীবন সদস্য।

ফজলুর রহমান খান তার এক প্রতিক্রিয়ায় নিজে রাজনীতি থেকে কখনো দূরে যেতে পারেননি। সেজন্য পরিবারের সদস্যদের রাজনীতির হাতেখড়ি দিয়েছেন। 

ফজলুর রহমান খান ফারুকের একমাত্র ছেলে খান আহমেদ শুভ বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি শুধু রাজনীতিতেই বঙ্গবন্ধুকে অনুস্মরণ করেননি, ব্যক্তি জীবনেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে চলেছেন।

আবু কাওছার/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়