ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চাঁদপুরে নেলবান ইনজেকশনের অবাধ ব‌্যবহারে বাড়ছে মৃত‌্যুঝুঁকি

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৩, ৪ মার্চ ২০২১
চাঁদপুরে নেলবান ইনজেকশনের অবাধ ব‌্যবহারে বাড়ছে মৃত‌্যুঝুঁকি

চাঁদপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে নেলবান ইনজেকশন। সরকার এ ইনজেকশনকে অবৈধ ঘোষণা করলেও এর ব‌্যবহার কমছে না। এতে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।

বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে পেথেডিন ও মরফিন ইনজেকশন অত্যাবশ্যকীয়। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া তা ব‌্যবহার করা যায় না। লাইসেন্স না থাকায় অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে পেথেডিন ও মরফিনের বদলে নেলবান ইনজেকশন ব‌্যবহার করা হচ্ছে। অন‌্যদিকে, পেথেডিন বা মরফিন ইনজেকশনের দাম নেলবানের চেয়ে বেশি। তাই কম দামের নেলবান ইনজেকশন দিয়েই অস্ত্রোপচার করছেন কিছু চিকিৎসক।

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিব উল করিম জানান, ব্যথানাশক ইনজেকশন ছাড়া অপারেশন করলে রোগীরা খুব ব্যথা অনুভব করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন। সরকার নারীদের প্রসব সংক্রান্ত যেকোনো অপারেশনে পেথেডিন ইনজেকশন ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিয়েছে। পেথেডিন ব‌্যবহারের লাইসেন্স না থাকায় অনেক ক্লিনিকে নেলবান ইনজেকশন ব‌্যবহার করা হচ্ছে। 

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শর্তসাপেক্ষে পেথেডিন ইনজেকশন সরবরাহ করে থাকে।

সচেতন নাগরিকরা অভিযোগ করছেন, চাঁদপুরের অধিকাংশ হাসপাতালে পেথেডিন ইনজেকশন ব‌্যবহারের লাইসেন্স নেই। তাই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যথানাশক ইনজেকশন হিসেবে নেলবান ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, যারা হাসপাতালে নেলবান ইনজেকশন ব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুর জেলা প্রাইভেট ক্লিনিক অ‌্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ‌্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এস এম সহিদ উল্লাহ বলেছেন, ‘নেলবান ইনজেকশনের ব‌্যবহার রোধে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে ভূমিকা রাখতে হবে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ জেলায় ৬৮টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুর সদর উপজেলায় ১৯টি, হাজীগঞ্জে ১১টি, শাহরাস্তিতে ৩টি, কচুয়ায় ৫টি, ফরিদগঞ্জে ৪টি, মতলব উত্তরে ৩টি এবং মতলব দক্ষিণে ৩টিসহ মাত্র ৪৮টি হাসপাতালে মরফিন বা পেথেডিন ইনজেকশন ব্যবহারের লাইসেন আছে। বাকি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স না নিয়েই নেলবান ইনজেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা প্রাইভেট ক্লিনিক অ‌্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ‌্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নেলবান ইনজেকশনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। অথচ জেলার অনেক হাসপাতালে এ অবৈধ নেলবান ইনজেকশন ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সব বেসরকারি হাসপাতালকে নেলবান ইনজেকশন ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেছি।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম দিদারুল আলম বলেছেন, ‘যে হাসপাতালগুলো পেথেডিন ইনজেকশনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, যাচাই-বাছাই করে তাদের লাইসেন্স দিয়েছি। তারা পেথেডিন ইনজেকশন ব্যবহার করছে। যারা এখনও অবৈধ নেলবান ইনজেকশন ব্যবহার করছে, তাদের বলব, দ্রুত নেলবান ইনজেকশন পরিহার করে পেথেডিন বা মরফিন ইনজেকশন ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের কাছে আবেদন করুন।’

সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেছেন, ‘পেথেডিনের বিকল্প হিসেবে নেলবান ব্যবহৃত হয়। যেসব চিকিৎসকের বিএমডিসির লাইসেন্স আছে, তারা পেথেডিন, মরফিন বা নেলবান যেটা ইচ্ছে সেটাই ব্যবহার করতে পারে। তবে ক্লিনিকগুলো কোথাও অবৈধভাবে নেলবান ইনজেকশন ব্যবহার করছে কি না, তা দেখার বিষয়।’

জয়/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়