ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুলনায় করোনায় মৃতদের গোসলে বিড়ম্বনা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা    || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২৬ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৯:০০, ২৬ এপ্রিল ২০২১
খুলনায় করোনায় মৃতদের গোসলে বিড়ম্বনা

দাফন টিমের সদস্যরা

খুলনায় করোনা সংক্রমণে মৃতদের গোসলের জন্য নেই নির্ধারিত স্থান বা ন্যূনতম ব্যবস্থা। ফলে মৃতদেহ গোসল করাতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

খুলনায় করোনা রোগীর জন্য নিবেদিত হাসপাতাল চত্বরেও গোসল করাতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়ছেন দাফন টিমের সদস্যরা। বাধার মুখে গোসল করাতে গেলেও সেখানকার আনসার সদস্যরা পানির লাইন পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। 

এমন পরিস্থিতিতে করোনা হাসপাতাল চত্বরে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে গোসলের ব্যবস্থাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন খুলনায় স্বেচ্ছাসেবারভিত্তিতে গড়ে ওঠা (দক্ষিণ ডুমুরিয়া ইমাম ও উলামা পরিষদ কর্তৃক গঠিত) দাফন টিমের সদস্যরা। এ দাবিতে তারা খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের গোসল ও দাফন নিয়ে তৈরি হয়েছে ভীতি ও আতংকের পরিবেশ। ভয়ে লাশের কাছে যেতে চান না নিজ সন্তান, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। প্রথমদিকে সংকটের সময় ছেলে বাবা লাশ নেয়নি। করোনা আক্রান্ত মাকে জঙ্গলেও ফেলে গেছে সন্তানরা। সেই সময় ২০২০ সালের ১২ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় কিছু সাহসী মুফতী, মুহাদ্দীস, আলেম, হাফেজ ও কলেজের ছাত্রদের নিয়ে দাফন টিম গঠন করা হয়। দাফন টিম রোববার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে করোনা মৃত ৫৮টি মরদেহ দাফন করেছেন। সরকারি সাহায্য ছাড়াই রাতে-দিনে নানা প্রতিকূলতা ও বাধার মুখে তারা কাজটি করছেন। দ্রুত ও নিরাপদে যাতায়াতের জন্য তাদের পরিবহন ব্যবস্থাও নেই। 

এমন পরিস্থিতিতে করোনা হাসপাতাল চত্বরে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের গোসলের ব্যবস্থাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন দাফন টিমের সদস্যরা। দাবিগুলো হলো, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোনো স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে গোসল করানোর শেড নির্মাণ; দাফন টিমের সদস্যদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য উপকরণ নিয়মিত সরবরাহ; দাফনে যাতায়াতের জন্য সড়কে পুলিশি হয়রানি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে টিমের সদস্যদের আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) দেওয়া; দাফন টিমের অসচ্ছল সদস্যদের প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া; স্বাস্থ্য উপকরণসহ ব্যবহারের মালামাল সংরক্ষণের জন্য একটি অফিসের বন্দোবস্ত করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আপদকালীন ও বিভিন্ন উৎসবকালীন সময়ে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণে দাফন টিমের সহায়তা নেওয়া। 

দাফন টিমের সমন্বয়কারী হাফেজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনায় মৃতদের গোসল করাতে গিয়ে একাধিকবার বাধার সম্মুখীন হয়েছি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ ও আনসার সদস্যদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোথাও গোসল করাতে দিতে চায় না। পানির লাইনও বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে্। কোনো উপায় না পেয়ে মৃতের আত্মীয়রা বোতলজাত পানি (মিনারেল ওয়াটার) কিনে দিলে তা দিয়ে গোসল করা হয়েছে। এ ঘটনা ৩ এপ্রিলের। এর আগে দৌলতপুরেও মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাধা দেয়। এ কারণে নির্দিষ্ট জায়গা হলে ভালো হয়।’ 

হাফেজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির গোসলে বাধার সম্মুখীন হলে বড় কষ্ট লাগে। নিজেদের অপরাধী মনে হয়। এ কাজ করতে গিয়ে যেন আমরা অপরাধ করে ফেলেছি।’ 

টিমের সদস্য সচিব মুফতী মো. ফয়জুল করীম রাইজিংবিডিকে বলেন, মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে গঠিত দাফন টিমকে খুলনা ছাড়াও যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ পাশের জেলায় যেতে হয় দাফনের কাজে। 

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, করোনায় মৃতদের গোসলের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেড নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও শহরে দাফন টিমের যাতায়াতের ব্যবস্থা এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণও সরবরাহ করা হবে। 

/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়