ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অনিয়মই তার কাছে নিয়ম, ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১২ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১০:১৬, ১২ জুলাই ২০২১
অনিয়মই তার কাছে নিয়ম, ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী

ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম

সব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে গোপনে কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কলেজের কর্মচারীদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

কয়েকজন অভিভাবক সদস্য, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে। এর আগেই কলেজে অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বর্তমান কমিটির কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে, নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোনো কমিটি গঠন, প্রিজাইডিং অথবা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ না করে, অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কোনো প্রকার নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা না করে, গোপনে নিজের ইচ্ছেমতো একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে তা অনুমোদন করিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ সকল প্রকার নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতিকেই পুনরায় সভাপতি করে এই করোনাকালীন কমিটি গঠন করেছেন। অভিভাবক সদস্যদের বাদ দিয়ে, নির্বাচন না করে, নিজের ইচ্ছেমতো ৩ জন অভিভাবক সদস্য মনোনীত করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধিও নিজের ইচ্ছেমতো করেছেন। নিজেই মনোনীত করেছেন বিদ্যোৎসাহী সদস্য।

সদ্য শেষ হওয়া কমিটির অভিভাবক সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, ‘সভা না করেই মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে গিয়ে অধ্যক্ষ নানা কথা বলে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়ে আসতেন। কলেজের স্বার্থেই আমি সই করেছি। এখন শুনছি গোপনে কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। অথচ আমরা কেউ কিছু জানি না।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক রবিউল করিম খান, মনিরুজ্জামান মনি, সোলেমান প্রামানিকসহ কয়েকজন বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি কলেজের নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। অথচ কবে কিভাবে হলো তার কিছুই জানলাম না। শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কাউকে কিছু জানায়নি। কোনো নোটিশও করেনি।’

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি, ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জানান, কোনো নিয়মনীতির বালাই নেই এই কলেজটিতে। স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন অধ্যক্ষ সাইফুল।

ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজ

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কলেজের কর্মচারীদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর, তা রহস্যজনক কারনে ধামাচাপা পড়ে যায়। 

এ বিষয়ে কথা হয় অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলামের সাথে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো প্রকার সদুত্তর দিতে পারেননি এবং তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণাদি দেখাতে পারেননি।

অধ্যক্ষ জানান, করোনাকালীন ব্যাপক প্রচার না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবকিছু করা হয়েছে। নির্বাচনি তফসিল, কমিটির রেজুলেশনসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজপত্র সব বাসায় আছে। পরে দেখাতে পারবো। উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। 

অধ্যক্ষ সাইফুল আরও জানান, বর্তমান সভাপতি আব্বাস উদ্দিনকে নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়। এছাড়া দু’জন শিক্ষককে সদস্য করা হয়। এর মধ্যে একজন একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক উত্তম গোস্বামী। আরেকজনের নাম তিনি বলতে পারেননি।

তাৎক্ষণিক কলেজ সভাপতি আব্বাস উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন প্রিজাইডিং অফিসার হবো? আমি তো কিছুই জানি না। অধ্যক্ষ কি করেছেন, তিনিই ভাল জানেন।’

সহকারী অধ্যাপক উত্তম গোস্বামী বলেন, ‘আমি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি কবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হলাম?’

চাটমোহর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তারা কিছু জানেনও না। তবে করোনাকালে কলেজগুলোতে আহবায়ক কমিটি গঠন করে চালানোর কথা রয়েছে। তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম জানান, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। যদি অভিযোগ পাই , তাহলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে জানানো হবে।

শাহীন/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়