ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইলিশে সরগরম চাঁদপুর মাছঘাট, জেলেদের মুখে হাসি

অমরেশ দত্ত জয়  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ২৮ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৪:০৪, ২৮ জুলাই ২০২১
ইলিশে সরগরম চাঁদপুর মাছঘাট, জেলেদের মুখে হাসি

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

বৃষ্টির কারণে স্রোত এবং পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।  প্রতিদিনই গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ বিভিন্ন সাইজের এসব ইলিশ এই অবতরণ কেন্দ্রে আমদানি হচ্ছে। ইলিশের এই আমদানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (২৮ জুলাই) চাঁদপুরের হরিনাঘাট, বহেরিয়া, পুরানবাজার, বড়ষ্টেশন মাছঘাট, আনন্দ বাজার ঘুরে ঘাটগুলোতে ইলিশে সরগরম বেচাকেনা দেখা গেছে।

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা শাহ্ মুহাম্মদ শোয়েব বলেন, ২০২০ সালে চাঁদপুর জেলায় মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২ হাজার ১৫২ মিলিমিটার। এ বছর ২৭ জুলাই পর্যন্ত মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৬৮ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিক নিয়মেই আরও বাড়বে।

এই বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে নদীর স্রোত বেড়ে যায়। ইলিশ আমদানি বৃদ্ধির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান। 

তিনি বলেন, পানি প্রবাহ নদীতে বাড়ছে তাই বরগুনা পটুয়াখালী হতে ইলিশ চাঁদপুর মোহনায় আসতে শুরু করেছে।  কারণ এটাই ইলিশের প্রধান প্রজনন কেন্দ্র। এ বছর ৫১.২% সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ইলিশ চাঁদপুরে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে।  ১০% যদি টিকে থাকে তাহলে ৩৭ হাজার ৮৫০ কোটি ইলিশ যুক্ত হয়েছে।  গতবার সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হলেও এবার ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনে পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।

নদীতে জেলেরা কম ইলিশ পাচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নে ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, পদ্মা মেঘনার যেসব চর-ডুবচর আছে সেসব জায়গা যথেষ্ট গভীর নয় বলে ইলিশ আসতে চায় না। তার ওপর বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষ্যার যে নদীদূষণ মেঘনার চাঁদপুর অঞ্চলের মোহনপুর এবং ষাটনল চ্যানেল দিয়ে নামে। এজন্য পানিতেও ইলিশের খাদ্যের একটা ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত ড্রেজিং করে ইলিশের প্রিডিং এবং ব্রিডিংয়ের দুটো পারপাস ঠিক রাখলে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়ানো যাবে। তবে বর্তমানে নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে সিলটেশন ক্ষতিকর না হওয়ায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইলিশ উৎপাদনে বরগুনা, পটুয়াখালীসহ অন্যান্য স্থানের চেয়ে চাঁদপুরের অবস্থান কেমন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মোহনা এবং উপকূল অঞ্চল বরগুনা, পাথরঘাটার মতো অঞ্চলে এখন ইলিশ একটু বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সাগর থেকে তারা এখন উঠে আসছে। মূলত আগষ্ট থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পূর্ণিমা অমাবস্যায় ইলিশের পূর্ণ মৌসুম। এই সময় ইলিশ আপ অঞ্চলে ডিম ছাড়া এবং জাটকা ছাড়ার উদ্দেশ্যে এসে থাকে।  মে-জুন-জুলাই তাদের একটি ডালস জ্বীন স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। জুলাই বা তার শেষের দিকে যখন পানি প্রবাহ বেড়ে যায় তখন বৃষ্টিপাতের আধিপত্যও বেড়ে যায়।

ইলিশে সরগরম বেচাকেনা

বড়স্টেশন মাছঘাটের ব্যবসায়ী মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চে করে ঘাটে অনেক ইলিশ আসতো। তা বন্ধ থাকায় ইলিশ আসতে পারে না। আমরা ঘাটে বেচাকেনার নির্ধারিত সময় বেধে দেওয়ায় দূরের পাইকাররাও ইলিশ কিনতে আসেন না। অন্য পরিবহনও বন্ধ। তাছাড়া নদীতে ছোট সাইজের ইলিশ পাওয়ায় ঘাটে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে।  দ্রুত তার অবসান ঘটবে বলে আশা করছি।

চাঁদপুর মৎস বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত বলেন, এক কেজি ইলিশের (৩ থেকে ৪টা ইলিশ) দাম মণ প্রতি ১৫ হাজার টাকা। আর ২টা ইলিশ মিলে ১ কেজি হয় সেগুলোর দাম ২৫ হাজার টাকা মণ এবং ১ কেজি বা তার ওপরের ইলিশগুলো ৩৫/৪০ হাজার টাকা দরে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ ঘাটের ব্যবসায়ী আলামিন গাজী, ইমরান হোসেন বলেন, এই ঘাটে আড়তদার, শ্রমিক, লেবার মিলিয়ে ১ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান। এখন ইলিশের আমদানি বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে মানুষের চাহিদা পদ্মার ইলিশ থাকলেও আমরা তা দিতে পারছি না।  মেঘনার ইলিশই ঘাটে বেশি।  ৯০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৫০ থেকে ১১০০ টাকা, ১২০০-১৩০০ গ্রামের ইলিশ ১৩০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি করছি।

চাঁদপুর মৎস বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার বলেন, ওপেন নিলামে ইলিশ বিক্রি হয় বলে এই মৎস অবতরণ কেন্দ্রটি সবার কাছে বেশি জনপ্রিয়।  লোকাল মার্কেট, সিলেট এবং উত্তর বঙ্গে এখানকার ইলিশ বেশি যাচ্ছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মণ ইলিশ এখন ঘাটে আমদানি হচ্ছে। ভোলা, হাতিয়া এবং পদ্মা মেঘনার ইলিশ ঘাটে বেশি আসছে। কেউ যদি নামার ইলিশ চাঁদপুরের পদ্মার বলে চালিয়ে দেয়, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, এবার চাঁদপুরে বৃষ্টিপাত কম। আগষ্টের পর বৃষ্টিপাত বাড়লেই ৫১ হাজার একশ জেলেসহ যারা রয়েছেন তারা পূর্ণ দমে নদীতে ইলিশ পাবেন। সরকারি নির্দেশনায় জাটকা ইলিশ নিধন রোধে জেলেদের তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।  বড় ইলিশ উৎপাদন হতে দিতে জেলেসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

চাঁদপুর/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়