ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন : শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে খুলনার প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১  
ইউপি নির্বাচন : শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে খুলনার প্রার্থীরা

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা এখন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ : সব ধরণের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টায়।

ফলে প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দরজায় দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ছেন তারা। ভোটারদের কাছে ডেকে দোয়াও চাইছেন।

খুলনা জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- দিঘলিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫৬ জন, ৩০৬টি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪৬৪ জন প্রার্থী লড়ছেন।  

ইউনিয়নগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন।

খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার এম মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়। এ সময়ের পর থেকে প্রার্থীরা আর প্রচারণা চালাতে পারবেন না।  

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণ সামগ্রি পৌঁছে যাবে।  

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনে খুলনার বেশির ভাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে একই দলের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।  কারণ এবার বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি। তবে, কোন কোন ইউনিয়নে বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

কয়রা :  উপজেলার  আমাদী ইউনিয়নে জিয়াউর রহমান জুয়েলের (নৌকা) সঙ্গে মুখোমুখি আমীর আলী গাইন, বাগালী ইউনিয়নে নৌকার আব্দুস সামাদ গাজীর সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা মোঃ ওয়ালিউল্লাহ্, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে শাহনেওয়াজ শিকারীর (নৌকা) শক্ত প্রতিপক্ষ দু’জন। তারা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম (বিএনপি) এবং উপজেলা আ’লীগের সদ্য বহিস্কৃত বিজয় কুমার সরদার (বিদ্রোহী প্রার্থী)।

মহারাজপুরে নৌকা মাঝি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সেনা সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন। কয়রা সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক মো. হুমায়ুন কবির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবীন ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম বাহারুল ইসলামের ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

এদিকে, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগ নেতা লুৎফর রহমান, জামায়াত নেতা নূর কামাল ও নৌকা প্রতীকের সরদার নুরুল ইসলামের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। আর দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম শামসুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জি এম সিরাজুল ইসলাম এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছের আলী মোড়লের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।

তবে উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ সোহরাব আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউপি সদস্য পদে নির্বাচিত হচ্ছেন।

দাকোপ : উপজেলার পানখালী ইউনিয়নে নৌকার শেখ আবদুর কাদেরের প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী আ’লীগ নেতা সাব্বির আহমেদ, দাকোপ সদর ইউনিয়নে বিনয় কৃষ্ণ রায়ের মুখোমুখি আ’লীগ নেতা সঞ্জয় রায়, কৈলাশগঞ্জে মিহির মন্ডলের নৌকার সঙ্গে বাইচ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায়ের, কামারখোলায় নৌকার মাঝি পঞ্চানন কুমার মন্ডলের প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ নেতা সমরেশ ঘরামী, তিলডাঙ্গায় রণজিৎ কুমার মন্ডলের নৌকা প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন গাজী।

বাজুয়ায় মানস কুমার রায়ের শক্ত প্রতিপক্ষ দেবপ্রসাদ গাইন, বানিশান্তা ইউপিতে নৌকার সুদেব কুমার রায়ের মুখোমুখী সুধাংশু বৈদ্য, আর সুতারখালী ইউনিয়নে নৌকার মাসুম আলী ফকিরের প্রতিপক্ষ গাজী আশরাফ।

তবে, লাউডোব ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ যুবরাজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন।

বটিয়াঘাটা: উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাদীউজ্জামানের প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আসলাম হালদার, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে মোঃ মুশিবর রহমান শেখের প্রতিদ্বন্দ্বী মো. গোলাম হাসান এবং আমিরপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম মিলন হালদারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী খায়রুল ইসলাম খান জনি।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম খান জনি।

দিঘলিয়া: উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নে নৌকার মোঃ কামাল উদ্দিন সিদ্দিক হেলালের প্রতিদ্বন্দ্বী তারই চাচাতো ভাই মফিজুল ইসলাম ঠান্ডা এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ; বারাকপুর ইউনিয়নে গাজী জাকির হোসেনের প্রতিপক্ষ শেখ আনসার আলী, সেনহাটি ইউনিয়নে নৌকার  মাঝি সাবেক চেয়ারম্যান ফারহানা নাজনীনের শক্ত প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নে মোঃ ফিরোজ মোল্লার মুখোমুখী হায়দার আলী মোড়ল, আর আড়ংঘাটা ইউনিয়নে নৌকার মোঃ মফিজুর রহমানের প্রতিপক্ষ বামপন্থী সংগঠনের নেতা এস এম ফরিদ আক্তার এবং যোগীপোল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকার শেখ আনিছুর রহমানের প্রতিপক্ষ নগর যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমান লিংকন।

পাইকগাছা: উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এছাড়া কপিলমুনিতে নৌকার মাঝি কওছার আলী জোয়াদ্দারের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মজিবুর রহমান, লতায় আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজল কান্তি বিশ্বাসের মুখোমুখি বর্তমান চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডল, দেলুটি ইউনিয়নে নৌকার রিপন কুমার মন্ডলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দিজেন্দ্রনাথ মন্ডল, সোলাদানা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার আবদুল মান্নান গাজী, লস্কর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের কেএম আরিফুজ্জান তুহিনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী করিম গাইন, গদাইপুরে নৌকার শেখ জিয়াদুল ইসলামের লড়াই হবে বর্তমান চেয়ারম্যান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী জোনায়েদুর রহমানের সাথে, রাড়ুলী ইউনিয়নে নৌকার আবুল কালাম আজাদের শক্ত প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আব্দুল মজিদ গোলদার, চাঁদখালী ইউনিয়নে নৌকার মুনসুর আলী গাজী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনি মোল্লা ও শাহজাদা ইলিয়াজের ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রয়েছে এবং গড়াইখালী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রুহুল আমিন বিশ্বাসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় সংসদ সদস্যের মামা আব্দুস সালাম কেরু।

খুলনা জেলা পুলিশ ও রিটার্নিং কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন অস্ত্রধারী পুলিশ, ১১ থেকে ১২ জন আনসার সদস্য, একজন গ্রাম পুলিশ শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবেন।

এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া থানায় রিজার্ভ ফোর্স থাকবে, জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হবে ঘটনাস্থলে। তাছাড়া র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ কেন্দ্র পরিদর্শন করবে।

খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার এম মাজহারুল ইসলাম জানান, জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা থাকবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি রয়েছে।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।

নুরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়