রংপুরে পেঁয়াজ-মরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

মানুষের খাদ্য দ্রব্যের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পেঁয়াজ ও মরিচ। পেঁয়াজ মরিচ ব্যতিত রান্না যেন অসম্ভব! গেল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুটি পণ্যের দামই বাড়তে শুরু করেছে রংপুরের বিভিন্ন বাজারে। শনিবার (৯ অক্টোবর) মরিচ কেজিতে বিক্রি হয়েছে খুচরা দরে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। 

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে দাম বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের। গত সপ্তাহের তুলনায় শনিবার কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০-৩৫ টাকা। হাঠাৎ লাগামহীনভাবে দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, খরিপ মৌসুমে (চৈত্র থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত) লাগানো মরিচের গাছগুলো এই সময়ে বাধ্যক্যে পৌছায়। ফলে ফলন কমে দাম বৃদ্ধি পায় বাজারে। এছাড়াও বৃষ্টিবাদলের কারণে এই মৌসুমে মরিচের চাষ কম হওয়ায় প্রভাব পরে বাজারে। 

তবে জেলায় এবার নতুন করে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে মরিচের চাষাবাদ হয়েছে। সেসব ক্ষেতের মরিচ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে রংপুর কৃষি বিভাগ (উদ্যান)। 

সরেজমিনে নগরির সিটিবাজার, লাবাগ বাজার, স্টেশন, সাতমাথা, মাহিগঞ্জ, বাস টার্মিনাল, মর্ডান মোড় সজবি বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে সদ্য তোলা সতেজ কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০টা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে যা ছিলো ১০০-১২০ টাকা। তার আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকা কেজি।

অপরদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টা কেজি দরে। গত সপ্তাহে বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিলো ৩০-৩৫ টাকা। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

রংপুর নগরীর লালবাগে বাজার করতে আসা বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি বলেন, কাচা মরিচের যে দাম কেজির স্বপ্ন বাদ ২৫ টাকায় আধা পোয়া কিনেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষের তরকারিতে ঝালের আশা বাদ দিয়ে রান্না করে খেতে হবে।

অটো রিকশা চালক মনিরুজ্জামান বাবু বলেন, হাফ কেজি পেঁয়াজ কিনলাম ৩৫ টাকা দিয়ে। কয়েকদিন আগেও এই টাকা দিয়ে এক কেজি কিনেছিলাম। আর ১০ টাকার কাচা মরিচ কিনলাম ১৩টা। একবার তরকারিতে শেষ হবে! চাউলের চাইতে এখন মরিচ কেনার চিন্তা বেশি করা লাগে।

স্থানীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, আড়তে বা মোকামে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তাই কেনা মূল্যের সঙ্গে সামান্য লাভ রেখে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তারা।

এর আগে শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রংপুর নগরীতে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন এসে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হওয়ায় সেখান থেকে দেশে পেঁয়াজ কম আসায় দাম কিছুটা বেড়েছে। আমদানি কম হওয়ার পাশাপাশি ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমাদের দেশেও দাম বেড়েছে। ভারতে দাম কমলে এখানেও কমে আসবে।’ তবে দাম যাতে বেশি বৃদ্ধি না পায় সেজন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রংপুর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দাবি, বাজারের দিকে সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে লাগামহীন দাম ঊর্দ্ধমুখি থাকলে বিপাকে পড়তে হবে নিম্ন আয়সহ মধ্যবিত্ত্ব মানুষকে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।