ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুলনায় স্বাস্থ্য বি‌ধির বালাই নেই, বেড়েছে করোনা শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১৬ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৬:১৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২২
খুলনায় স্বাস্থ্য বি‌ধির বালাই নেই, বেড়েছে করোনা শনাক্ত

খুলনা মহানগরীতে স্বাস্থ‌্য বি‌ধির তোয়াক্কা করছেন কেউ। শহরে ব্যাপক জনসমাগম যেমন রয়েছে, তেমনি নেই শারীরিক দূরত্ব। আর মাস্কও ব্যবহার করছেন না অনেকেই।এভাবেই চলছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধের বাস্তবায়ন। 

নগরীতে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অব্যস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরণের শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ না করায় শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। ফলে টিকা নিতে এসে প্রতিরোধের পরিবর্তে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। 

এদিকে খুলনা বিভাগে একদিন পর আবারও বেড়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগেরদিন (শনিবার) শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩২ জন।

খুলনা মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্র ডাকবাংলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরীতে আসা মানুষ। এদের অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক।নগরে মানুষের চলাচলও স্বাভাবিক। মার্কেটের দোকানগুলোতেও রয়েছে উপচে পড়া ভিড়।

ডাকবাংলা মোড়ে পুলিশ সার্জেন্ট প্রীতম সাহা জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে কেউ মানছেনা। পুলিশের উপস্থিতি দেখে তাড়িঘড়ি করে মুখে মাস্ক লাগিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অনেকে। কিছুক্ষণ আগে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে কয়েকজনকে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপরও দূরে গিয়ে তারা মাস্ক খুলে উন্মুক্ত হওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

পিকচার প্যালেস মোড়ে কথা হয় সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের বাণিজ্য বিভাগের সাবেক শিক্ষক মো. রুহুল আমিন শিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কে শোনে কার কথা। করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বড় বাজারের যে অবস্থা তা দেখে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। খুব দ্রুত কাজ সেরে সেখান থেকে বের হয়েছি।’

সরকারি পাইওনিয়ার কলেজের সাবেক শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ এভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও নগরীতে জনতার ঢল নেমেছে। সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই এখানে অনুপস্থিত।’

খুলনা বিভাগে একদিন পর আবারও বেড়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগেরদিন শনিবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩২ জন। সেই তুলনায় রোববার (১৬ জানুয়ারি) করোনা শনাক্ত হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ স্বাক্ষরিত করোনার বিভাগীয় প্রতিবেদনে একথা উল্লেখ করা হয়। 

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে যশোরে। সেখানে ৪০ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদিন খুলনায় ২৫, ঝিনাইদহে ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে তিন জন করে এবং সাতক্ষীরায় দুই জনের করোনা শনাক্ত হয়। তবে গত ২৪ ঘন্টায় কুষ্টিয়া, বাগেরহাট ও মাগুরায় কারও করোনা শনাক্ত হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগের ওই প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, খুলনা বিভাগে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ১০ জেলায় মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯৩ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ১৯৫ জন।

শনাক্ত সংখ্যা বিবেচনায় জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনা। এখানে ২৮ হাজার ১২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যায় সবচেয়ে কম মাগুরায়। সেখানে ৪ হাজার ১৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনায়। এই জেলায় মারা গেছে ৮০৯ জন। আর মৃতের সংখ্যায় সবচেয়ে কম সাতক্ষীরা। সেখানে মারা গেছেন ৮৮ জন।

এদিকে, চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে রোববার নগরীর তালতলা হাসপাতালে  স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রদান করা হয়। এ হাসপাতালে খুলনা জিলা স্কুল, মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম থেকে ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১ম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রখর রোধের মধ্যে সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। এতে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। 

অভিভাবক জিয়াউস সাদাত ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মেয়েকে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর দুপুর ২টায় টিকা দিতে পেরেছে। এখানে কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে এ টিকা প্রদান করা হচ্ছে। কারও যেণ কোনো দায় নেই। অথচ, প্রতিটি স্কুলের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং সুশৃঙ্খল লাইনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নিলেও এতটা ঝুঁকি ও দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। তাছাড়া স্কুলে স্কুলে টিকাদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং টিকাদান কর্মী- সবার জন্যই ভালো হতো। এ বিষয়ে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণে শনিবার খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন কুমার রাজবংশী, আরিফুল ইসলাম ও দেবাশীষ বসাক। এসময় মাস্ক না পড়াসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় করায় মোট ৩৪টি মামলায় ৩৪ জনকে ৮ হাজার ১৭০ টাকা জরিমানা করা হয়।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘সারাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে অনীহা, একস্থানের মানুষ অন্য স্থানে যাতায়াত, মাস্ক না পড়াসহ বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি মাসের শুরু থেকে খুলনায়ও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। জেলায় ৮ থেকে ৯ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।’

নূরুজ্জামান/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়