পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে আবাসন খাত প্রসারের সম্ভাবনা
ডেস্ক রিপোর্ট || রাইজিংবিডি.কম
![পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে আবাসন খাত প্রসারের সম্ভাবনা পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে আবাসন খাত প্রসারের সম্ভাবনা](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022March/555-2206121343.jpg)
পদ্মা সেতু শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকাসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের মেলবন্ধনই তৈরি করে দেয়নি, উন্মুক্ত করে দিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ সম্ভাবনাকে। শরীয়তপুরের আবাসন খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জেলা সদরের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম মাদবর বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে দীপ্ত পদক্ষেপে চলতে শুরু করেছে পাকা স্থাপনা তৈরির কাজ। পদ্মা সেতু স্থাপনের ফলে শরীয়তপুরের আবাসন খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অনেক সামর্থবান ব্যবসায়ীসহ উচ্চপদে চাকরিজীবীরা শরীয়তপুরে বসবাস করতে অনাগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সেতুর বদৌলতে এখন নিজ এলাকায় স্থায়ী বসবাসের প্রত্যয়ে নির্মাণ করতে শুরু করেছেন অট্ট্রালিকা। ফলে আগে যেখানে সরকারিবাবে স্থাপনা নির্মাণের বাইরে গড়ে প্রতি মাসে গড়ে ১০-১২ লাখ টাকার ইমারত নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি হতো তা এখন দ্বিগুণেও বেশিতে দাঁড়িয়েছে। আশা করছি পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে শুরু করলে এর পরিমাণ আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।
পদ্মা সেতু শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীদের এনে দিয়েছে নতুন স্বাধীনতার প্রশান্তি। এর মাধ্যমে নিরাপদ, সহজ ও ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীদের পৌঁছে দেবে আস্থার ঠিকানায়। ইতোমধ্যে জেলার ব্যবসায়ীরা দেখতে শুরু করেছেন আগামীর সোনালী স্বপ্ন। তৈরি হচ্ছে নতুন-নতুন শপিংমল, মার্কেট ও স্বতন্ত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এ মহাযজ্ঞের হাত ধরে ব্যাপক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবন-মানেরও ব্যাপক উন্ননের স্বপ্ন বুনছে জেলার ব্যবসায়ীরা।
শরীয়তপুর সদরের পালং বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বেপারী বলেন, বৈশ্বিক করোনা সংকটসহ নানা জটিলতায় শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা দুর্দিনের মধ্যে ছিলেন। পদ্মা সেতুকে ঘিরে এখন সকল ব্যবসায়ীরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছে। ইতিমধ্যে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসার সম্প্রসারণসহ আগের ব্যবসায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে শুরু করেছেন। রাস্তা-ঘাট সম্পসারণ ও নতুন-নতুন পাকা স্থাপনা গড়ে উঠতে শুরু করায় রড-সিমেন্ট, টাইলস, হার্ডওয়্যাার, কাঠের আসবাবপত্রসহ নানা ব্যবসা এখন পেয়েছে নতুন গতি। সার্বিকভাবে বলতে গেলে পদ্মা সেতু শুধু শরীয়তপুরের সঙ্গে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই সহজ করেনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক ঝড়ের গতি তৈরি করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ রোস্তোরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও শরীয়তপুরের অন্যতম ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা চিকন্দি ফুড পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহাগ মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের শরীয়তপুরবাসীর জন্য উন্নয়নের আলাদিনের চেরাগ বলা যায়। এখন শুধু সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ঘষা দেয়া। আর শরীয়তপুর পদ্মা মেঘনা বেষ্টিত জেলা হওয়ায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ কেবলই সময়ের ব্যাপার।
মিরাশার চাষীবাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, কৃষি সমৃদ্ধ আমাদের জেলার কৃষকরা অনেক সময়ই তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেত না। ফলে যেভাবে বাণিজ্যিক কৃষির দিকে কৃষকদের অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল তা কিছুটা স্তিমিত ছিল, পদ্মা সেতুর ফলে তা পুনর্জীবন পাবে। কৃষকরা যখন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে তখন তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হবে। যা জেলার কৃষি ভান্ডার উপজেলা খ্যাত জাজিরাসহ সকল উপজেলার কৃষি উৎপাদনকে অণুপ্রাণিত করবে।
ইতিমধ্যে আমাদের জাজিরার উৎপাদিত সবজি যে পরিমাণ রপ্তানি হয়, সেতু হওয়ার ফলে যখন যোগাযোগ সহজ ও সাশ্রয়ী হবে তখন এ রপ্তানির পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। কৃষকরাও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে নানা বৈচিত্রময় ও উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছেন। তাই আমরা আশা করছি জাজিরাসহ শরীয়তপুরের কৃষকরা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
জেলার কৃতি সন্তান এফবিসিসিআই এর ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, আড়াল সী লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও ক্রিক লাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বাদল বলেন, আমাদের জেলায় ইতিপূর্বে তেমন কোন পর্যটন ভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠেনি। জেলা ক্যাটাগরিতে শরীয়তপুর ৬৪ নম্বর জেলা হওয়ায় আমরা সার্বিক উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হইনি। তবে পদ্মা সেতুকে ঘিরে পর্যটনসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রিক অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এক সময় জেলাবাসীর জন্য ছিল অভিশাপ। পদ্মা সেতুর কারনে সেই চরাঞ্চল এখন সবচাইতে মূল্যবান ও চাহিদা সম্পন্ন ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা ছাড়াও অনেক বড়-বড় কোম্পানি বিনোদন প্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য রিসোর্ট করতে হন্যে হয়ে খুঁজছেন জমি। এ যেন দুর্গম চরাঞ্চল নয়, এখন সম্ভাবনার পরশ পাথর। পদ্মা সেতু জেলাবাসীর কষ্টের কালো রাতকে শেষ করে আনন্দ ও তৃপ্তির সোনালী সূর্য উদিত করে দিয়েছে। তাই সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়, শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের অন্যতম আর্ষনীয় পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা।
শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি, জেলা আওয়াামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক একেএম ইসমাইল হক বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে শরীয়তপুরে শুরু হবে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। পর্যটন কেন্দ্রেকে ঘিরে থ্রি-স্টার মানের হোটেল-মোটেল তৈরি হবে। এছাড়া গড়ে উঠবে গার্মেন্টস, মাঝারি শিল্প সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প। উন্নয়ন সাধিত হবে মৎস্য, গবাদিপশু ও কৃষি খাতের। বিস্তৃত হবে সাধারণ ব্যবসার পরিসর, বাড়বে বিনিয়োগ। যা শুধু এই অঞ্চলের অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করবে না ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
তথ্য সূত্র: বাসস।
/বকুল/
আরো পড়ুন