ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৮ কি.মি. হেঁটে রাতেই জনসভাস্থলে আসে ইয়াকুব 

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ২৫ জুন ২০২২   আপডেট: ১৭:১৫, ২৫ জুন ২০২২
৮ কি.মি. হেঁটে রাতেই জনসভাস্থলে আসে ইয়াকুব 

সমাবেশস্থল

আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন করবেন দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে শুক্রবার দিবাগত (২৪ জুন) রাত ৩টা থেকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের জনসভাস্থলে হাজির হতে শুরু করে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা ও শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ। 

ভোরের আলো ফুটতেই বাড়তে থাকে ভিড়। বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি ভরে আসতে থাকে লাখ লাখ মানুষ। মাদারীপুরের পাঁচ্চর থেকে শুরু হয় গাড়ির জটলা। প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে জনসভাস্থলে হাজির হন অনেকে। তবে এই পথ চলাতে ছিল না ক্লান্তি। ছিল উচ্ছ্বাস। 

রাত ৩টায় হাজির ষাটোর্ধ্ব ইয়াকুব আলী 
রাত ৩টার দিকে ছেলেদের নিয়ে কাঁঠালবাড়ীর জনসভাস্থলে হাজির হন ষাটোর্ধ্ব ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে। কুতুবপুর ও মাদবরের চর ইউনিয়নের লোকজন রাতেই চলে আসবে শুনেছিলাম। তাই মঞ্চের সামনে জায়গা পেতে আগে চলে এসেছি। শেখের বেটিকে (শেখ হাসিনা) সামনে থেকে দেখতে চাই।’ 

শুধু ইয়াকুব আলী নয়, হাজারও মানুষকে জনসভাস্থলের আশপাশে দেখা যায় রাত ৩টায়। কুতুবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম দরানী বলেন, ‘রাত ৩টায় জনসভাস্থলে এসেছি। ভোররাতেই এই ইউনিয়নের অন্তত ৭-৮ হাজার মানুষ জনসভাস্থলে পৌঁছে গেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো এলাকায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও টহল।’ 

রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের ঢল
সকাল ১০টার পর শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ভিড়ের কারণে কাঁঠালবাড়ীর সীমানা এলাকা থেকে জনসভাস্থলের দিকে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই কিলোমিটার পথ বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে ছুটতে থাকে মানুষ। কারও গায়ে হলুদ টিশার্ট, কারও গোলাপী, কারও আবার নীল। সবার টিশার্টে পদ্মা সেতুর ছবি আর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শুভেচ্ছাবার্তা। 

সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টি থামলে কড়া তাপে হাজির হয় সূর্য। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে একের পর এক মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে ঢুকতে থাকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আওয়ামীলীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। আগতদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা, পদ্মা সেতুর ছবি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছাবার্তা।

মাথায় নৌকা এঁকে নাতি নিয়ে ভৈরব থেকে নুরুল ইসলাম 
পদ্মা সেতু দিয়ে ভৈরবের মানুষের যাতায়াতের বিষয় না থাকলেও ১০ বছরের নাতিকে নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার নুরুল ইসলাম। দুই জনই চুল কেটে মাথায় এঁকেছেন নৌকা ও বাংলাদেশের পতাকা। এত দূর পাড়ি দিয়ে এসে গরমে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল বৃদ্ধ নুরুল ইসলাকে। পদ্মা সেতু তো ভৈরবের মানুষের তেমন কাজে আসবে না, তবুও কেন এসেছেন— জিজ্ঞাসা করতেই হাত উঁচু করে বলে ওঠেন ‘জয় বাংলা’। এককথায় উত্তর দেন, ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের। আর বাংলাদেশটা আমাদের সবার।’

কানায় কানায় পূর্ণ সবাবেশস্থল
আওয়ামীলীগের প্রত্যাশা ছিল অন্তত ১০ লাখ মানুষ হবে জনসভায়। সংখ্যা গোনা সম্ভব না হলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। মানুষ একটু দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজতে ছুটতে থাকে এদিক-ওদিক। অনেককে ফিরে যেতে দেখা যায়। কাঁঠালবাড়ীর সীমানা এলাকা থেকে ফেরিঘাটে সমাবেশস্থল পর্যন্ত সড়কে তখন দুইমুখী জনস্রোত। যারা সকালে বা রাতে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই ফিরে যান সমাবেশ শুরুর আগে।

প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে বাসার ছাদে হুড়োহুড়ি 
বিশাল সমাবেশস্থলে জায়গা না হওয়ায় অনেক মানুষ অবস্থান নেয় আশপাশের অলিগলি, বাসাবাড়িতে। মঞ্চ থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। জনসভামঞ্চ দেখতে বাসের ছাদে উঠে পড়ে শত শত মানুষ। মোবাইল হাতে ভিডিও করতে থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানাতে দেশের পতাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, পদ্মা সেতুর ছবি নিয়ে আকাশে হাজির হয় অনেকগুলো হেলিকপ্টার। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসতেই পুরো সমাবেশস্থলে লাখো মানুষের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়