ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ওসির উপস্থিতিতে হিটলু হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ২৪ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৬:২৩, ২৪ আগস্ট ২০২২
ওসির উপস্থিতিতে হিটলু হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ

ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা

ধর্ষণের আলামত নষ্টের অভিযোগের পর এবার বগুড়ার ধুনট থানার ওসির রুমে তার উপস্থিতিতে মাদক ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম হিটলু নামে এক যুবককে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। 

নিহতের স্ত্রী শেফালী খাতুন ন্যায় বিচারের জন্য আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ২৩ মে পুলিশ হেডকোর্টার থেকে নির্দেশ আসার পর বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তকালে সাক্ষীরা থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালার নির্দেশে এবং ওসির রুমে বসে হিটলুকে খুনের পরিকল্পনা করা হয় বলে লিখিত জবানবন্দী দিয়েছেন। 

ইতোমধ্যে হিটলু হত্যা মামলাটি ধুনট থানা পুলিশের কাছ থেকে স্থানান্তর করে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল রাতে ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামে আরিফুল হিটলুকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তার লাশ গুম করার উদ্দ্যেশে পার্শ্ববর্তী শাজাহানপুর উপজেলায় একটি কবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। পরদিন ১৭ এপ্রিল হিটলুর লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। 

এ ঘটনায় নিহত হিটলুর স্ত্রী শেফালী খাতুন ১৯ জনকে আসামি করে ১৯ এপ্রিল ধুনট থানায় মামলা করেন।( মামলা নম্বর-১১)।

ওই সময় ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা রাইজিংবিডির প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘হিটলুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল শাজাহানপুর ও ধুনট উপজেলার লোকজন। তার বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মাদক, পুলিশের ওপর হামলা, জুয়া খেলাসহ ৮টি মামলা রয়েছে। তিন মাস আগে হিটলু জামিনে মুক্ত হয়। মালেক নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় এলাকার লোকজন একত্র হয়ে হিটলুকে ধরে এ ঘটনা ঘটায় বলে জানতে পেরেছি।’ 

নিহত হিটলুর স্ত্রী শেফালী খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘তার স্বামীর হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি পলাশকে গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় হিটলু ১ কেজি গাঁজাসহ আটক করে থানায় খবর দেয়। পুলিশ আসার আগেই পলাশ গাঁজা ও মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যান। পুলিশ গাঁজাসহ মোটরসাইকেল থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন থানার ওসি মামলা না নিয়ে মোটরসাইকেল ছেড়ে দেন। 

অভিযোগে শেফালী আরো উল্লেখ করেন, ওই ঘটনার জেরে গত ১৬ এপ্রিল বিকেলে পলাশ ও তার শ্বশুর জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন আসামি থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালার রুমে বসে হিটলুকে খুনের পরিকল্পনা করেন। সেখানে থানার ওসি হিটলুকে খুনের নির্দেশ দেন। হিটলু খুনের পর থানায় মামলা দিতে গেলে ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বলেন হিটলু গনপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। বাদীর অভিযোগ ১৯ এপ্রিল থানায় মামলা রেকর্ড হলেও থানার ওসি আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেননি।

নিহত হিটলুর বাবা আব্দুল জলিল বলেন, ‘ আমার ছেলে আগে বিএনপির রাজনীতি করতো। খুন হওয়ার অনেক আগেই হিটলু যুবলীগে যোগ দেয়। হিটলু থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এলাকায় জুয়া চালাতো এবং বালির ব্যবসা করতো।  ডিএসবি পুলিশের এক সদস্য হিটলুর কাছে টাকা নেওয়ার পরেও জুয়ার আসরের ছবি তোলে। এ কারণে হিটলু সেই পুলিশকে মারধর করে। এরপর পুলিশ হিটলুকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। ওখানে মারামারি হয়েছে। গন্ডগোল হয়েছে।’

হিটলু হত্যা মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।’

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম বলেন, ‘হেডকোর্টার থেকে নির্দেশ আসার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’ 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত নষ্টের অভিযোগ ওঠে। গত ২ আগস্ট ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা বগুড়ার পুলিশ সুপার বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে মামলার তদন্তভার বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) দেওয়া হয়। 

ওই কিশোরীর মা অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার মেয়েকে ধর্ষণের বিষয়টি জানার পর তিনি ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। তদন্ত চলাকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি মুরাদুজ্জামান মুকুলকে গ্রেপ্তার করেন এবং তার কাছ থেকে ধর্ষণের ভিডিও, মোবাইল ফোন জব্দ করেন। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১৪ মে তাকে ডেকে ধর্ষণের ভিডিওগুলো দেখান এবং তাকে জানান উদ্ধার হওয়া ভিডিওগুলো সিডি করে উদ্ধারকৃত ফোনের সঙ্গে সিআইডিতে পাঠানো হবে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা জব্দ তালিকায় এবং আলামত ফরেনসিকে পরীক্ষার জন্য পাঠানো তালিকায় উদ্ধার হওয়া ভিডিওর সিডি পাঠানোর বিষয় উল্লেখ না করে শুধু উদ্ধার হওয়া ২টি মোবাইল পাঠিয়েছেন।’ 

এনাম/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়