ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় মানিকার চর

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ২২:২৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় মানিকার চর

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ঐতিহাসিক চর মানিকারচর বাজার। মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এ চর মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত এবং পশু, পাখিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিকিকিনির বাজার হিসেবে বেশ পরিচিত।

প্রতি সপ্তাহে এখানে বৃহস্পতিবার ও সোমবার বসে বিরাট হাট। প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি ডিগ্রি কলেজ, ব্যাংক, বীমা, এনজিও, হাসপাতাল, শপিংমল থাকা এই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের  পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে প্রতিদিন।

সম্ভাবনাময় বাজারটি একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ডুবে যায়। কয়েক বছর যাবত এই বেহাল অবস্থায় ব্যবসায়ীরা লোকসান দিতে দিতে দিশেহারা। প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে ক্রেতা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে এখন আর আসে না। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাজারটি।

শাওন নামে এক মুদি দোকানি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে দোকানের সামনে ক্রেতা আসে না, বিক্রি কমে গেছে। পুঁজি ভেঙে খেতে হচ্ছে। এভাবে আর কত দিন? ফুটপাতে বসা শত শত কৃষক কৃষি সামগ্রী নিয়ে হাটের দিন পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও পানিতে ডুবে থাকার ফলে আগের মতো কেনাবেচা হয় না বলে জানান মাধবপুর গ্রামের কৃষক মোখলেস।

বাজারের ব্যবসায়ী পল্টু সাহা বলেন, বৃষ্টি হলেই ধান-চাল-সারসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকায় থাকেন অন্তত ৪০ জন ব্যবসায়ী। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বাজার। ময়লা ও আবর্জনার পানিতে সয়লাব হয়ে যায় বাজারের  অলিগলি।

বাজারের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহাজান শিকদার, রতন মিয়া, দীপক সাহা, কামরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মো. ফারুক, রাজু দাস, রতন মিয়া সমবেত হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, বাজারের আশপাশে অপরিকল্পিত বালু ভরাট করে দোকান, ঘর বাড়ি নির্মাণ; কোনো প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় দোকানে পানি উঠে অনেক মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিতে পড়তে হয় দোকানিদের। সবাই মিলে একটা পানির মেশিন কিনেছেন। এটা দিয়ে পানি সরান। বেশি বৃষ্টি হলে এটা দিয়েও কাজ হয় না।

মানিকারচর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি তানভির হাসান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি অনেকবার ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। উপজেলা থেকে অনেকবার ইঞ্জিনিয়ার এসে মাপ দিয়ে যান। এই পর্যন্ত শেষ। পরে আর কিছু হয় না্।’

বাজার কমিটির সভাপতি মানিকারচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি অনেকবার উপজেলা আইনশৃখলার মিটিংয়ে এই বাজারের বিষয়টি তুলে ধরেছি। ইউএনও আমাকে আশ্বস্ত করেছেন খুব শিগগিরই ব্যবস্থা হবে।’

এ বিষয়ে মেঘনা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার বলেন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পের আওতায় আমরা বাজারটি অন্তর্ভুক্ত করেছি। আগামী অর্থবছরে হয়ে যাবে বলে মনে করছি। এখানে ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। চলতি বছরও বাজারটি ইজারা দিয়ে সরকার ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব পেয়েছে। কিন্তু বাজারের ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকায় প্রতি বছর এভাবে বর্ষণ হলেই বাজার তলিয়ে যায়।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা বাজার কমিটির সঙ্গে কথা বলে আপাতত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো। স্থায়ীভাবে বাজারটির ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বাজারটি প্রকল্পের আওতায় এনেছি। আগামী নভেম্বরে টেন্ডার হবে বলে আশা করছি।’ 
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়