নষ্ট হচ্ছে জব্দ করা যানবাহন
শামীম কাদির, জয়পুরহাট || রাইজিংবিডি.কম
![নষ্ট হচ্ছে জব্দ করা যানবাহন নষ্ট হচ্ছে জব্দ করা যানবাহন](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022August/Joypurhat-2209231046.jpg)
জয়পুরহাটে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে বিভিন্ন সময় জব্দ হওয়া মোটরসাইকেল এভাবেই পড়ে রয়েছে l
জয়পুরহাটের পাঁচটি থানা চত্বরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা যানবাহনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোটরসাইকেল। এছাড়াও রয়েছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপসহ নানা ধরনের গাড়ি। সব মিলিয়ে যার সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। তবে বছরের পর বছর জব্দকৃত এসব যানবাহন অযত্ন আর রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থাকায় এখন প্রায় অকেজো।
জব্দকৃত এসব যানবাহনের কোনোটির রেজিস্ট্রেশন নেই আবার কোনোটি মামলার কারণে আটকে আছে। আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় এসব গাড়ি একদিকে যেমন নিলামে বিক্রি করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব থেকে। জয়পুরহাট সদর থানা, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরে পুলিশি হেফাজতে অযত্নে পড়ে থাোয় এক সময় উপযোগিতা হারাচ্ছে যানবাহনগুলো।
জয়পুরহাটের পাঁচটি থানা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকায়, মাদক বহনের কারণে কিংবা দুর্ঘটনার দায়ে যানবাহন জব্দ করা হয়। বর্তমানে এসব যানবাহনের চেহারা বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। জব্দ করা যানবাহন আলামত হিসেবে থানায় সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশও বেকায়দায় রয়েছে।
জয়পুরহাটের সবকটি থানা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা মোটরসাইকেল ও অনান্য গাড়ি থানার বেশিরভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে। ফলে থানার ভেতরের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে। কোনো ছাউনি না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রোদে-বৃষ্টিতে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে মরিচা ধরে জরাজীর্ণ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে গাড়িগুলো।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জব্দকৃত মোটরসাইকেলগুলোর অনেক মালিকের প্রকৃত কাগজপত্র নেই। এছাড়া কোনো কোনো গাড়ির তুলনায় রেজিস্ট্রেশন কিংবা মামলার খরচ বেশি পড়ায় মালিকরা আদালতে মামলা পরিচালনায় অনীহা প্রকাশ করেন। পুলিশের হাতে আটক যানবাহনগুলোর প্রকৃত জিম্মাদার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত। আদালতে পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব যানবাহন থানা চত্বরে রাখা হয়েছে।’
জয়পুরহাট জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক নন্দলাল পার্শী বলেন, ‘কোটি কোটি টাকার মালামাল এভাবে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।’
এভাবে আলামত জমতে থাকা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ‘অধিকাংশ সময় মামলার বাদী ও সাক্ষী উভয়ই পুলিশ পুলিশ সদস্যরা হয়ে থাকেন। বদলিজনিত কারণে অনেক সময় তারা সাক্ষী দিতে আসেন না। ফলে মামলার কার্যক্রমে দীর্ঘ সময় লাগছে। এছাড়া বিচারক সংকটের কারণেও মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। ফলে জব্দকৃত যানবাহন নিলামে বিক্রি করা অথবা প্রকৃত মালিককে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।’
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘জেলায় বিভিন্ন সময় আটক মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ভটভটি, রিকশা-ভ্যান, পিকআপ, ট্রাকসহ প্রায় ১২ হাজার যানবাহন আলামত হিসেবে রয়েছে। এসব যানবাহন সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থানা বা আদালতে নেই। তবে মোটরযানগুলোর গুণগত মান ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘জব্দকৃত যানবাহনগুলোর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে একদিকে যেমন মালিকরা তাদের যানবাহন ফেরত পাবেন, অন্যদিকে মালিকবিহীন যানগুলো নিলামে বিক্রি করে বিপুল রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতে পারে।’
মাসুদ
আরো পড়ুন