ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভারত থেকে পানিতে আসা বালি পাথরে নষ্ট হচ্ছে হাওরের কৃষি জমি

আল আমিন, সুনামগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৩:২৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ভারত থেকে পানিতে আসা বালি পাথরে নষ্ট হচ্ছে হাওরের কৃষি জমি

ভারত থেকে বন্যার পানিতে আসা বালি ও পাথরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার কৃষি জমি। হাওরের ফসলি জমিতেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। শুধু তাই নয়, হাওর ও নদীর তলদেশে পলি ভরাটে পানির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় ভারতের মেঘালয়ে একদিনের বৃষ্টিতে এ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয় বলে মনে করছে পরিবেশ ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তবে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় সীমান্ত এলাকায় ক্ষতি হলেও হাওর এলাকায় তেমন ক্ষতি হয়নি।

জেলা সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ‘খরচার হাওর’র অনেক জায়গা ইতোমধ্যেই ভরাট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষক। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর বোরো ধান, ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন, ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদ হয়। কিন্তু এবারের বন্যায় আউশ ধানচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারত থেকে আসা বন্যার পানির সঙ্গে বালি ও পলিমাটিতে ভরাট হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং এবং সুরমা ইউনিয়নে দুই থেকে আড়াইশ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর, দোহালিয়া, বোগলা বাজার, সুরমা, নরসিংপুর, পান্ডারগাঁও, বাংলাবাজার ও মান্নারগাঁওসহ আটটি ইউনিয়নে একশ আট হেক্টর জমি। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার ছড়া দিয়ে ভারত থেকে নেমে আসা বালি ও পাথরেও অনেক কৃষি জমি, বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় বালু এবং পাথরে ভরাট হয়ে কৃষি জমি এখন শুকনো মাঠে পরিণত হয়েছে। 

জানা গেছে, যে বছর বন্যায় পানি বেশি হয়, সে বছর বালি ও পলিমাটি বেশি আসে। এবারের বন্যা ভয়াবহ ছিল। ফলে জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোর নদী দিয়ে বালি মাটি বোরো জমি ও রোপা আপন জমিতে প্রবেশ করেছে। এতে ধানি জমি নষ্ট হয়েছে। হাওরে কৃষিজমির পরিমাণ দিনদিন কমছে। এসব জমিতে ধান চাষ  করা যাবে না বলে কৃষকরা জানান। তবে কৃষি বিভাগ বলছে এসব জমিতে সবজি বা রবিশষ্য চাষাবাদ করলে ভালো হবে।

খরচার হাওরের কৃষক হাশমত আলী বলেন, এবারের বন্যায় খরচার হাওরে কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে বেশি। হাওরে আমাদের সব জমি বালি ভরাটে শেষ হয়ে গেছে। এখন আর ওই জায়গায় ধান চাষ করা যাবে না।

কৃষক সানোয়ার মিয়া বলেন, আমার বাড়ির পেছন থেকে খরচার হাওর শুরু। বন্যায় বাড়ির পেছনে বিশাল জায়গা বালিতে ভরে গেছে। কৃষিজমি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। 

হাওর এরিয়া আপলিস্টম্যান্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, এ বছর বন্যায় জেলার অনেক উপজেলায় ফসলি জমিতে বালু ও পলিমাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। অনেক কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে। এভাবে কৃষিজমি ভরাট হতে থাকলে এক সময় সংকট দেখা দিতে পারে। তাই আমি মনে করি, সমস্ত হাওরকে মাস্টারপ্লানের আওতায় এনে কাজ করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যত্রতত্র করা যাবে না। হাওর ও নদী খনন বা যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পিত করতে হবে। হাওরের নিচু এলাকায় বাঁধ হওয়ায় পানি নামতে পারে না। যে কারণে পাহাড়ি নদীগুলোও ভরে যাচ্ছে। শুধু ফসলি জমি না, অনেক সীমান্ত নদীও বালি ভরাটের কারণে মরে যাচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবীর বলেন, উপজেলার সীমান্ত এলাকার ছড়া দিয়ে ভারত থেকে নেমে আসা বালি ও পাথরে অনেক জায়গা কৃষিজমি, রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে চানপুর নয়াছড়া এলাকায় বালু এবং পাথরে ভরাট হয়ে কৃষিজমি এখন মাঠে পরিণত হয়েছে। আমরা সেখান থেকে বালি পাথর নিলামে বিক্রি করছি। প্রতি বছর এই বালু ভরাট অব্যাহত রয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, দফায় দফায় বন্যায় জেলার সীমান্ত এলাকায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও হাওর এলাকায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে কিছু জায়গায় পাহাড়ি পানির সাথে পলি এসে বোরো জমিতে পরায় জমির উপকার হয়েছে। এখন ফসলে সার কম লাগবে। এ পলিতে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। 

হাওর ও নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি দেখায় দেয় উল্লেখ করে বিমল সোম বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেখার বিষয়। 
 

/তারা/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়