ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস আজ: গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৩ ডিসেম্বর ২০২২  
ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস আজ: গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

আজ ৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ এর আজকের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। অত্র অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে আজকের এই দিনে।

এদিকে জেলা শহর এবং পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত অসংখ্য গণকবর আর বধ্যভূমি। অনেক বধ্যভূমি এখন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে পড়ে থাকা এসব গণকবর দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ গণকবর আর বধ্যভূমি এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে।

আরো পড়ুন:

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্যাতন চালায় তারা। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণে মেতে ওঠে পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশি দোসররা। ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় পুরো ঠাকুরগাঁও।

এরই মধ্যে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন দুর্বার প্রতিরোধ। ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম. খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এই মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাক বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা শক্তি বৃদ্ধি করে সদলবলে প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে।

শুখানপুকুরী ইউনিয়নের জাঠিভাঙা বধ্যভূমি

২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শত্রুমুক্ত হয়।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ড আব্দুল মান্নান বলেন, ঠাকুরগাঁও তখন ছিল মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এই মহকুমার অন্তর্গত। ৩ ডিসেম্বর সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। হাজার হাজার মানুষ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ বলতে বলতে মুক্ত শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসেন। সেসময় অনেকের হাতে ছিল প্রিয় স্বদেশের পতাকা।

 

আব্দুল মজিদ নামের এক প্রবীণ জানান, ১৯৭১ সালে ২৩ এপ্রিল শুখানপুকুরী ইউনিয়নে ২ হাজার থেকে ২৫০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। পরে মারা যাওয়াদের শুকানপুরে মাটি চাপা দেয় তারা। আমরা আমাদের এই শুকানপুকুরী বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।

রানীশংকৈল খুনিয়াদিঘি স্মৃতিসৌধ

রাজাগাঁও ইউনিয়নের বিমলা রাণী বলেন, ‘পাকিস্থানি বাহিনী আগে খরিলুপের বাড়িত আইছিল। খরিলুপের বাড়ি থেকে আসিল হামার বাড়ি। হামরা সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি করি। কিন্তু হামাক সবাকে ধরে নিয়ে আসিল। হামার বস্তির তামাক লোকলাকে ধরে নিয়ে আসিছিল। সবাকে লাইন করে দাড়ায় থুইল। ওই সময় মুই গর্বপতি ছিনু। মিলিটারি বন্দুনটা দিয়ে মোর পেটটাতে গুতা দিছে আর মুই কিছু কহিবা পারু না।’

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরুদ্দৌজা বদর বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে যারা এতোটুকু কুণ্ঠিত হননি, সেই সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা আজও তাদের যথাযথ মর্যাদা পাননি।’

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম শহীদদের কবর

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুব রহমান বলেন, ‘জেলার বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া আমরা ঠাকুরগাঁওবাসী ৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত যথাযথ মর্যাদায় পালন করছি।’

মঈনুদ্দীন/ মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়