ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিদ্যুৎ বিল নিয়ে জটিলতা, বিপাকে গ্রাহক

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৪ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:১৭, ৪ জানুয়ারি ২০২৩
বিদ্যুৎ বিল নিয়ে জটিলতা, বিপাকে গ্রাহক

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে বিদ্যুৎ অফিসের লাখ টাকার বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সুনীল চন্দ্র দাস নামের এক ব্যক্তি। বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ অফিস, ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের কথায় বিদ্যুৎ অফিসের এক দালালকে ৮৯ হাজার টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। 

লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করতে দুই শতাংশ ভিটে বাড়ি বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় না থাকায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। 

সুনীল চন্দ্র দাস গোপালপুর গ্রামের কানাই লাল দাসের ছেলে। তিনি বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক গ্রাম পুলিশ সদস্য।

বিলের কাগজে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে সুনীল চন্দ্র দাসকে দেওয়া বিদ্যুৎ বিলে ২২ হাজার ২০০ ইউটিনের বিপরীতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৬ টাকা বিল করা হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিল করা হয়েছে। সুনীল চন্দ্র দাস এই সময়ে কোনো বিল পরিশোধ না করেই দালাল ও বিদ্যুৎ অফিসে ঘুরেছেন। ফলে বিদ্যুতের বিল বাড়তে থাকে।

সুনীল চন্দ্র দাস বলেন, ‘২০১২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক হই। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমারর ৪১৩ টাকা বিল আসে।’ 

সুনীল চন্দ্র দাসের বিলের স্ট্যান্টমেন্ট থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত তার প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে বিল আসতো। কিন্তু ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ৭৯ হাজার ৬৮৪ টাকা বিল আসে। বিদ্যুৎ অফিসে একাধিকবার ঘুরাঘুরি করে কোনো সুরাহা না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পরামর্শ করেন। চেয়ারম্যানের পরামর্শে ওই এলাকার আজমত নামের এক দালালের কাছে ৭৫ হাজার টাকা দেন বিল পরিশোধের জন্য। পরে আরও ১৪ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তিন বছরেও বিল পরিশোধ করেননি তিনি। উল্টো তাকে হুমকি দেন আজমত।

সুনীল চন্দ্র শীলের প্রতিবেশী সোরমান বলেন, ‘সুনীলের যে বিল এসেছে তার পক্ষে বিলের এই টাকা ঋণ করা বা বাড়ি বিক্রি ছাড়া কোনভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব না।’ 

সুনীলের স্ত্রী পারুল রানী দাস কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরে আসার পর থেকে খুব কষ্টে দিন পার করি। তারপরও বিদ্যুৎ অফিসের গাফিলতিতে লক্ষাধিক টাকা বিল এসেছে। এটা চিন্তা করে রাতে ঘুম ধরে না। কার কাছে গেলে সুরাহা পাবো তাও জানি না। আমাদের মিটারের রিডিং অনুযায়ী বিল করার দাবি জানাচ্ছি।’

সুনীল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ঘরে একটি ফ্যান ও একটি লাইট রয়েছে। আমার ছেলের ঘরে একটি ফ্যান, একটি লাইট ও একটি টেলিভিশন চলে। তারপরও কোনো মাসে ১ হাজার টাকার বেশি বিল আসেনি। কিন্তু এখন বিদ্যুতের যে বিল এসেছে তা নিয়ে আমি বিপাকে পড়েছি। আমি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজর দিতে অনুরোধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজমতকে দুই দফায় আমি ৮৯ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার টাকা ফেরতসহ আজমতের শাস্তি জানাচ্ছি।’

অভিযুক্ত আজমত বলেন, ‘টাকা বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। আমি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। এ বিষয়ে পরে কথা হবে।’ 

বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘বিষয়টি আমি সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। টাকা ফেরত দিতে আজমতকে একাধিকবার বলা হয়েছে।’

বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম মতিয়ার রহমান মন্টু বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি বিষয়টি জেনেছি। এলাকায় ভুতুড়ে বিল ও দালালদের দৌরাত্ম বন্ধের জন্য বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাহাগীর হোসেন এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অফিসে ডেকে নিয়েও বক্তব্য না দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের কক্ষ থেকে চলে যান।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়