ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মাঘের বিকেল রাঙিয়েছে শত বছরের ঘোড় দৌড়

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১০:৩৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩
মাঘের বিকেল রাঙিয়েছে শত বছরের ঘোড় দৌড়

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা রং ও আকারের ঘোড়া সমবেত হয়েছিল একটি স্থানে। এগুলো এসেছিল জয়-পরাজয়ের খেলায়। মাঘের কুয়াশামাখা শীতের দুপুর থেকে বিকেলকে দৌড়ে দৌড়ে রঙিন করেছে, উষ্ণ করেছে এই ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারের দল।

গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড়কে বাঁচিয়ে রাখতে মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়া গ্রামের বাসিন্দারা প্রতি বছরই আয়োজন করেন এই ঘোড় দৌড়ের। এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে মানিকগঞ্জ ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হতে হন হাজারো দর্শক। 

আরো পড়ুন:

দুপুর গড়াতেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করে প্রতিযোগিরা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন আয়োজকরা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বালিয়াখোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হালটে  শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় ৩০টি ঘোড়া অংশ নেয়। 

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিযোগী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বাপ চাচারাও এই ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। বংশ পরম্পরায় আমরাও ঘোড়া নিয়ে আসি। হার জিতের চেয়ে সবাই একসঙ্গে হতে পারি এটাই বড় আনন্দের।’ 

আরেক প্রতিযোগী মো. রাসু মিয়া বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে শত বছরের এই ঘোড় দৌড়ে অংশগ্রহণ করি। অনেক অঞ্চলে ঘোড় দৌড় হারিয়ে গেছে। তবে বালিয়াখোড়ার ঘোড় দৌড় এখনো টিকে আছে। তবে আগের মতো জৌলুস নেই। তারপরও ঘোড় দৌড়ে আনন্দের শেষ নেই।’ 

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘শখের বশে ঘোড়া পালন করি। শত বছরের এ ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় আমার ঘোড়া দুলদুল অংশ নিয়েছে। সরকারিভাবে সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ঘোড় দৌড়ের আয়োজন করা গেলে গ্রামীন এ ঐতিহ্য বেঁচে থাকবে।’ 

মো. মাসুদ রানা নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির কথা বলে৷ দেশের যেখানেই থাকি প্রতি বছর কাছের মানুষজনদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা দেখতে চলে আসি৷’

মো.আফসার আলী নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বাচ্চাদের নির্মল আনন্দে দিতে ঘোড় দৌড় দেখতে নিয়ে এসেছি। বর্তমাস সময়ে বাচ্চা কাচ্চারা ইন্টারনেটে আশক্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামীন এ ধরনের খেলাধুলা ইন্টারনেট  আসক্তি থেকে বের হওয়ার ভালো উপায়।’ 

অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতাটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বই পুস্তকে এ খেলার বর্ণনা মিললেও বাস্তবে খুব একটা আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে আর স্থানীয় মানুষদের বিনোদন দিতেই এই প্রতিযোগিতা।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়