ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যুবলীগ নেতার বাধায় তিন জেলায় ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:১৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩
যুবলীগ নেতার বাধায় তিন জেলায় ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ

ফাইল ফটো

চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম জোয়ার্দ্দারের বাধায় বন্ধ হয়ে গেছে তিন জেলায় বিএডিসির পূর্ণনির্ধারিত দামের ধান বীজ সরবরাহ। এতে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার এই দুইদিন ধান বীজ উত্তোলন করতে পারেননি কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিলাররা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই। যুবলীগের আহবায়ক নঈম জোয়ার্দ্দারের বাধার কারণে কোনো লেবার কাজ করছেন না। এতে ডিলারদের মধ্যে পূর্ণনির্ধারিত দামের ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। 

বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ বিতরণ বর্ষে বিএডিসির কুষ্টিয়া বিপনন ও চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের প্রায় তিন হাজার টন বোরো ধান বীজ পূর্ণনির্ধারিত দামে বিক্রয়ের অনুমোদন দেন কর্তৃপক্ষ। গত ১১ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আঞ্চলিক বিপনন কার্যালয়ে প্রেরণ করে শর্তসাপেক্ষে ধান বীজ বিক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে ব্রি-২৮ ধানসহ সব চিকন জাতের ধান বীজের দাম প্রতি কেজি ৩৮টাকা ও ব্রি-২৯ ধান বীজসহ মাঝারি চিকন জাত ৩৭ টাকা এবং সব মোটা জাতের ধান বীজ ৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। পরে বিধি মোতাবেক ডিলারদের মধ্যে পূর্ণ বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, যে সব ডিলাররা বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজসহ অন্যান্য বীজ উত্তোলন করেছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিএডিসির একটি সূত্র জানায়, নির্দেশনা না মেনে বিএডিসির দুই ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা পূর্ণনির্ধারিত দামের ১ হাজার ১০০ টন ধান বীজ সালাউদ্দিন নামে চুয়াডাঙ্গার এক ডিলারকে দেওয়ার জন্য কুষ্টিয়া অফিসকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্ত কুষ্টিয়া বিপনন কার্যালয় থেকে বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজসহ অন্যান্য বীজ উত্তোলন করা ডিলারদের মাধ্যে পূর্ণনির্ধারিত দামের ধান বীজ পূর্ণ বরাদ্দ দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন প্রভাবশালী ডিলার সালাউদ্দিনসহ বিএডিসির ওই দুই কর্মকর্তা। সর্বশেষ চাপের মুখে ডিলারদের বরাদ্দকৃত ধান বীজ কর্তন করে ওই ডিলারকে ৬৬০ টন ধান বীজ দিতে বাধ্য হন কুষ্টিয়া বিপনন কার্যালয়। কিন্তু এতেও সন্তুস্ত হয়নি বিএডিসির ওই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ডিলারদের অভিযোগ, ৪৪০ টন ধান বীজ না দেওয়ায় ওই দুই কর্মকর্তার ইন্ধনে ডিলার সালাউদ্দিন যুবলীগ নেতা নঈম জোয়ার্দ্দারকে লেলিয়ে দেন। বুধবার সকালে বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে ডিলারদের একাধিক ট্রাক আটকে দেন নঈম জোয়ার্দ্দারের লোকজন। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় পূর্ণনির্ধারিত দামের ধান বীজ উত্তোলন।

ডিলাররা আরো জানান, চলতি বছর অত্র অঞ্চলে বিএডিসির গম বীজ চরম সংকট সৃষ্টির পেছনে বিএডিসির ওই দুই কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে। বরাদ্দকৃত বীজ ডিলারদের নামে বরাদ্দ না দিয়ে কয়েক টন গম বীজ সালাউদ্দিন নামে ওই ডিলারকে দিয়ে অধিক দামে কালোবাজারে বিক্রি করিয়েছেন। যার কারণে এই অঞ্চলে গম বীজের চরম সংকট দেখা দেয়।

মেহেরপুর জেলার বীজ ডিলার আরমান আলী বলেন, ‘আমি বিএডিসির সব বীজ সর্বোচ্চ পরিমাণ বিক্রয় করি। অথচ বরাদ্দ দেওয়ার সময় লাভজনক বীজ একজন অব্যবসায়ী ডিলারকে বেশি দেওয়া হয়। এরসঙ্গে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। সর্বশেষ বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজ উত্তোলনের আনুপাতিকহারে আমার নামে পূর্ণ নির্ধারিত দামের ধান বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত ধান বীজের পে-অর্ডার কুষ্টিয়া বিপনন দপ্তরে জমা দিয়ে মেমো কেটে চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে উত্তোলন করতে যায়। বুধবার সকালে আমার ট্রাক ধান বীজ লোড করতে গেলে বিএডিসির কর্মকর্তারা জানান কোনো ধান বীজ দেওয়া যাবে না। তারা বলেন যুবলীগের নেতারা বীজ দিতে নিষেধ করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম জোয়ার্দ্দার পূর্ণ নির্ধারিত দামের ধান বীজ ডিলারদের দিতে নিষেধ করেছেন। এখানকার লেবাররাও তাদের নিয়ন্ত্রিত। নিষেধ করায় লেবারও কাজ করছেন না। এতে দুইদিন ধরে পূর্ণনির্ধারিত দামের ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা নঈম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আমি ধান বীজ উত্তোলনে বাধা দেয়নি। তবে আমি বলেছি, চুয়াডাঙ্গার ডিলাররা কম পেয়েছে।’ 

কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসি বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুবায়েদ রিপন বলেন, ‘কৃষি ভবনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের কারণে সারাদেশে ডিলারদের ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সারাদেশে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ওই দুই কর্মকর্তার মনোনীত একজন করে ডিলার রয়েছে। তাদের মাধ্যমে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই দুই কর্মকর্তা।’

কুষ্টিয়া বিএডিসি বীজ বিপনন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কোনো চাপ নেই। যে সব ডিলাররা বীজ সহায়তা দরে বোরো ধান বীজসহ অন্যান্য বীজ উত্তোলন করেছেন তাদের মধ্যেই পূর্ণ নির্ধারিত দরের ধান বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে চুয়াডাঙ্গা থেকে ধান উত্তোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে আমিও শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়