ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাবনায় হাসপাতালে নার্সকে মারধর, কর্মবিরতি পালন

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  
পাবনায় হাসপাতালে নার্সকে মারধর, কর্মবিরতি পালন

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত রাজা হোসেন (২৫) নামের এক ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সাদ্দাম হোসেন নামের এক দালালের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হাসাপাতালের ক্লিনিক্যাল ইন্টার্ন নার্সরা ৬ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতে পালন করছেন।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের মহিলা ইউনিটে মারধর করা হয়। পরে ঘটনার বিচার চেয়ে দিনব্যাপী কর্মবিরতি করেন ইন্টার্ন নার্সরা। এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনার বিচার চেয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ও সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীরা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনার ইছামতি নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজা হোসেন দুপুরের দিকে মেডিসিন ওয়ার্ডের মহিলা ইউনিটে ডিউটিরত ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়ির স্টাফ নার্স আশরাফুন্নেছাও ছিলেন। ভূক্তভোগী ওই নার্স একজন ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর ওষুধ দিচ্ছিলেন। সেই রোগীর সঙ্গে থাকা একজন আত্মীয় তাকে বলেন, দেখেন ৮০ টাকার ইসিজি ৬০০ টাকা দিয়ে করিয়েছে।

এই নিয়ে রোগীর আত্মীয় ও হাসপাতালের দালাল সাদ্দাম হোসেনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় নার্স রাজা হোসেন ওই দালালকে উত্তেজিত না হয়ে রোগীর সঙ্গে হাসপাতালের বাহিরে গিয়ে কথা বলতে বলেন। তখন দালাল সাদ্দাম হোসেন ওই নার্সের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে নার্সদের অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে গলা থেকে আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। তার সঙ্গে থাকা আর একজন নার্সকে তুলে নিয়ে যেতে চান সাদ্দাম।

নার্সকে মারধরের ঘটনায় দিনব্যাপী কর্মবিরতিতে ছিলেন হাসপাতালের ইন্টার্ন নার্সরা। রোগী হয়রানি বন্ধ করা, নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নার্সদের কাজে হস্তক্ষেপ না করাসহ ৬ দফা দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

বাংলাদেশ ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট নার্সেস ইউনিয়ন পাবনা শাখার সভাপতি জাহিদ হাসান বলেন, এর আগেও দালালরা হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসক ও নার্সকে মারধর করেছে। সেই ঘটনার বিচার হয়নি। ফলে বারবার তারা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেইসঙ্গে দালালমুক্ত হাসপাতাল দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনার পরই হাসপাতালে ছুটে আসেন পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কৃপা সিন্দু বালা। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগী নার্সদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এ সময় ওসি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের ঘটনা শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ভূক্তভোগীর নার্সের কাছ থেকে সব ঘটনা শুনেছি। একটি অভিযোগও পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সেই সঙ্গে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও দালালমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্যবিভাগের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর পরই আমি হাসপাতালের ইন্টার্ন নার্সদের কাছে যাই। তবে অভিযুক্তকে সেখানে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদ বৈঠক করেছি। হাসপাতালের বহিরাগতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
 

শাহীন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়