ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যৌতুক চেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে এএসপি বরখাস্ত

শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২১:২৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
যৌতুক চেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে এএসপি বরখাস্ত

রুবেল হক। ফাইল ফটো

যৌতুক চেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রুবেল রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এক প্রজ্ঞাপনে রুবেল হককে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে আদেশের কপি গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রুবেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশিক্ষণে আছেন বলে জানান। তবে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রুবেলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। ২০২১ সালের ৩১ মে নওগাঁর মেয়ে সায়মা সুলতানার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন রুবেল। বিয়ের পর স্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যান। তখন যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে রুবেলের বিরুদ্ধে। সে সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্যাতনের কথা জানান সায়মা।

পরে বদলি হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আসেন রুবেল। সেখানেও সায়মার ওপর চলে নির্যাতন। তখন সায়মা থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। এরপর নির্যাতনের অভিযোগ করে ৯৯৯-এ ফোন করেন সায়মা। বাড়িতে পুলিশ এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেন।

মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রূপন কুমার দাশ ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুবেল হক ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে যোগ দেন। চাকরি পাওয়ার আগে থেকেই সায়মার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। বিয়ের দুই সপ্তাহ পর থেকেই রুবেল নারায়ণগঞ্জে তার সরকারি কোয়ার্টারে বন্ধুদের নিয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার মদের আসর বসাতেন। থানায় জব্দ করা মদ নিয়েই আসর বসাতেন তিনি।

স্ত্রী সায়মা কিছু বললেই তকে চড়-থাপ্পড় মারতেন। ওই কোয়ার্টারেই রুবেলের বাবা-মা থাকতেন। সায়মা তাদের কাছে অভিযোগ করলে তারা বলতেন, এসপি এ রকম বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা-ড্রিংকস করতেই পারে। তারপরও কিছু বললে তারা সায়মাকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বলে গালি দিতেন। নারায়ণগঞ্জে একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সায়মা।

সায়মা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিয়ের আগেই খরচ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল রুবেলের বাবা। ব্যাংকের মাধ্যমে আমার বাবা ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। প্রমাণ রেখে টাকা দেওয়ায় ভীষণ চটেছিল রুবেলের পরিবার। পরে বিয়ের দিন আরো ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিয়ের উপহার ও অন্যান্য বাবদ খরচ করানো হয় আরো ৯ লাখ টাকা। তারপরও রুবেলের দাবি কমেনি। বিয়ের পর একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা দাবি করে আসছিলেন। দিতে না পারায় অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো আমার ওপর। নির্যাতন সইতে না পেরে আদালতে মামলা করি। সেই মামলায় রুবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। তিনি এখন জামিনে আছেন।’

সায়মা বলেন, ‘আমাদের ডিভোর্স না হলেও আলাদা থাকি। গত বছরের ২৯ আগস্ট রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আদালতে মামলা করি ৬ সেপ্টেম্বর। তবে ১২ সেপ্টেম্বর রুবেল তার বাবাকে দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করান। এতে আমার পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধে উল্টো ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় সমন জারি করেন আদালত। ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হলে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২ অক্টোবর পর্যন্ত কারাভোগ করি। পরে জামিনে মুক্তি পাই।’

মামলা তুলে নিতে রুবেলের পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘রুবেল হকের নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছরের ৯ ও ১০ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি ছিলাম। ১১ আগস্ট ছিল শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েও তখন নওগাঁ যাই। তারপর ১২ আগস্ট গ্রামের বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু রুবেলের বাবা জারজিস আলী যে মামলা করেছেন, তাতে ঘটনার তারিখ দেখানো হয়েছে ১২ আগস্ট। এটি পুরোপুরি মিথ্যা। শুধুমাত্র রুবেলের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে বাধ্য করতেই এই পাল্টা মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তর সায়মার অভিযোগ তদন্ত করেছে। এছাড়া রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টিও জেনেছে। তাই তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে রুবেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কথা বলব না। প্রশিক্ষণে আছি।’

বরখাস্ত হওয়ার পরেও রুবেল প্রশিক্ষণে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন বলেন, ‘রুবেল কি বলেছেন সেটা জানি না। তার বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনটি গত সোমবার পেয়েছি। সরকার যখন বরখাস্তের অর্ডার জারি করে, তখন থেকেই এটা কার্যকর।’

কেআই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়