ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফুচকা বিক্রি করে জিপিএ-৫ পেলেন তাহিবুল 

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:১০, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ফুচকা বিক্রি করে জিপিএ-৫ পেলেন তাহিবুল 

ফুচকা বিক্রি করে পড়ালেখা করছেন তাইবুল। স্বপ্ন দেখেন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বাবা-মার কষ্ট দূর করার।

সকালে পড়াশোনা আর বিকেলে বাবার সঙ্গে ফুচকা বিক্রি। এভাবেই দিন কাটে তাহিবুল ইসলামের। তবে এখন বাবার বয়স বেড়ে যাওয়ায় তাহিবুলকেই দোকান সামাল দিতে হয়। সংসারের খরচ আর নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাহিবুল পুরোদমে ফুচকার দোকান চালান। এর মধ্যেই চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। আর এই সংগ্রামের সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এবারের আলিম পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫  গোল্ডেন ‘এ প্লাস’  পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এই শিক্ষার্থী।

তাহিবুল বিরামপুর পৌর শহরের পূর্বপাড়ার বাদল হোসেন-আনিসা বেগম দম্পতির ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বাবার অভাবের সংসারে বেড়ে উঠা তাহিবুল পঞ্চম শ্রেণি পড়া অবস্থায় ফুচকার দোকানে কাজ করছেন। 

তাইবুল মাধ্যমিকের গণ্ডিতে সকালে লেখাপড়া আর বিকেলে ব্যস্ত থাকেন শহরে রাস্তার পাশে ফুচকার দোকানদারিতে। বাবার বয়স বেড়ে যাওয়া, সংসার ও লেখাপড়ার খরচ মেটাতে তিনি এখন ফুচকার দোকান চালিয়ে সবকিছু করছেন।

জীবনের সব বাধাবিপত্তিকে পিছনে ফেলে গত বুধবার দুপুরে প্রকাশিত আলিম পরীক্ষায় তাহিবুল জিপিএ-৫ পান। তার এই সাফল্যে পরিবারের সবাই আনন্দে ভাসছেন। এমনকি যারা তাইবুলের দোকানে ফুচকা খেতে আসছেন তারাও তাকে প্রসংশায় ভাসাচ্ছেন।

তাইবুল উপজেলার চাঁদপর ফাজিল মাদরাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেন।

প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান চালান তাইবুল

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পৌর শহরের ঢাকামোড়ে গিয়ে দেখা যায়, নিজ হাতে দোকান সাজিয়ে ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করছেন তাহিবুল। তার গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পাওয়ার খবরে সেখানে ফুচকা খেতে আসা সবাই তাহিবুলের প্রশংসা করছেন। 

তবে এমন খুশির দিনেও জিপিএ-৫ পাওয়া অন্য শিক্ষার্থীদের মত আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড় করার সুযোগ নেই তাহিবুলের। পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার যোগাতে বিকেল থেকে ফুচকা বিক্রি করছেন তিনি। 

ফুচকা খেতে আসা আতিকুর রহমান বলেন, ‘তাহিবুল আমাদের বিরামপুরবাসীর গর্ব। তাকে সাধুবাদ জানায়। গরিবের ঘরে জন্ম নিয়ে, সংসারের অভাব দূর করে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েছেন তিনি। আমরা সবাই খুশি। তার জন্য আমরা দোয়া করি। আশা করি তাহিবুল একদিন অনেক বড় হবে।’

তাহিবুলের বাবা বাদল হোসেন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। গত ২৫ বছর ধরে এই ফুচকার দোকান দিয়ে সংসার চলাই। আমার আর কোনো উপার্জন নাই। ছোট বেলা থেকে আমার ছেলে আমার ব্যবসায় সহযোগীতা করে। বর্তমান আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে, চলতে কম পারি। তাই কয়েক বছর ধরে তাইবুল সংসার এবং ব্যবসার দায়িত্ব নিয়েছে। বিকেলে ফুচকা দোকান দেয় রাত পর্যন্ত চলে ব্যবসা। বাড়িতে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করে। ছেলে আমার অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। ঠিকমতো খরচাপাতি দিতে পারি না। প্রাইভেট দিতে পারিনি। আজ আমার ছেলে অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে, আমি খুবই খুবই খুশি।’

তাহিবুল বলেন, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি যখন পড়ি তখন থেকে বাবাকে ফুচকার দোকানে সাহায্য করি। সকালে মাদরাসায় যেতাম। বিকেলে দোকানে ফুচকা আর চটপটি বিক্রি করতাম। রাতে লেখাপড়া শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে ফুচকা আর চটপটির উপকরণ প্রস্তুত করতাম। এভাবেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭৮ পেয়েছি। সেদিন ‘এ’ প্লাস না পাওয়ায় মনটা খারাপ হয়ছিল। পরে, আমার শিক্ষকরা আমাকে সাহস দেন। অবশেষে আলিমে ভর্তি হই। সকালে মাদরাসায় ক্লাস করি। আর বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তার পাশে ফুটপাতে ফুচকা বিক্রি করি। এবার আলিম পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছি। স্বপ্ন দেখি, দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। বাবা-মার কষ্ট দূর করবো।’

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়