ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সাদ্রী ভাষা

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১২:২৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সাদ্রী ভাষা

প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা না থাকায় জয়পুরহাটে হারিয়ে যেতে বসেছে সাদ্রী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা। জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে এই বছর দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে সাদ্রী ভাষার বই দেওয়া হলেও শিক্ষক না থাকায় বইগুলো রপ্ত করতে পারছে না ওই সম্প্রদায়ের শিশুরা। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পড়ালেখার কারণে এবং চর্চা না থাকায় তারা ভুলতে বসেছেন নিজেদেরই মাতৃভাষা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক লাখ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন জয়পুরহাট জেলায়। যাদের অধিকাংশের বসবাস পাঁচবিবি উপজেলায়। সাঁওতাল, মাহাতো, পাহান, ওঁড়াও এবং সাদ্রীসহ ১৩ গোত্রের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাস করেন এখানে। তাদের অধিকাংশই কথা বলেন সাদ্রী ভাষায়। যা হাজার বছরের চর্চার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে। 

কিন্তু সাদ্রী ভাষার বই পড়ানোর জন্য কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি বিদ্যালয়গুলোতে। ফলে বইগুলো শিশুদের আদতে কোনো কাজেই আসছে না। পারিবারিকভাবে এই ভাষার চর্চা অব্যাহত থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চর্চা না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা ভুলতে বসেছে তাদের মাতৃভাষা। সাদ্রী ভাষার পরিবর্তে বাধ্য হয়ে তারা রপ্ত করছেন বাংলা ভাষা। 

পাঁচবিবি উপজেলার কাঁশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্ষা মাহাতো বলেন, ‘আমরা স্কুলে খালি বাংলা ও ইংরেজি পড়ি। তাই আমরা বাড়িতে গিয়েও বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমরা এখন আমাদের ভাষা ঠিকমতো বলতে পারি না।’

অমিত পাহান নামের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ায় না। খালি বাংলা ভাষা পড়ায়। তাই আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বলতেও পারি না, লিখতেও পারি না।’

রতন মাহাতো বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষরা সাদ্রী ভাষায় কথা বলতে পারলেও আমরা এখন এই ভাষায় ঠিকমতো কথা বলতে পারি না। স্কুলে আমরা বাংলা ভাষা শিখে বড় হয়েছি। আমরা চাই সরকার স্কুলগুলোতে আমাদের ভাষায় শিক্ষাদান চালু করুক।’

কাঁশপুর আদিবাসী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিত্ত কুমার মাহাতো বলেন, ‘আগে পারিবারিকভাবে এ ভাষার প্রচলন থাকলেও এখন বাংলা ভাষার প্রচলন বেড়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগ আর প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দিলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাদ্রী ভাষা সংরক্ষণ করা সম্ভব। তা না হলে এই ভাষা হারিয়ে যাবে।’

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংগঠন পামডোর-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হৈমন্তী সরকার দেবী বলেন, ‘আমাদের ভাষার বই সরকার দিলেও তা পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক দেয়নি। আমরা চাই আমাদের ভাষা টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হলো- কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে, যখন প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে, মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করতে পারবে, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ভাষায় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই ভাষায় পারদর্শী শিক্ষকরা স্কুলগুলোতে নিয়োগ পেলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করার সুযোগ পাবেন।’

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়