ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গোদাগাড়ীর ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ৬ মার্চ ২০২৩  
গোদাগাড়ীর ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা

ইউএনও জানে আলম

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জানে আলমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। 

সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী জেলা জজ আদালতের একজন আইনজীবী বাদী হয়ে রাজশাহীর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ও জ্যেষ্ঠ দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেছেন।  মামলা করা আইনজীবীর নাম সালাহউদ্দিন বিশ্বাস। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করতে দিয়েছেন। 

আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে তিনি মামলা করেছেন। তাঁর পক্ষে আইনজীবী রায়হান কবীর মামলা ফাইলিং করেছেন। বিচারক আবদুর রহিম মামলাটি দুদককে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

গত ২৬ জানুয়ারি আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস ইউএনও জানে আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। একটি খাস পুকুর ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ আইনে তিনি মামলাটি করেন। আদালত ওই মামলাটি পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

নতুন মামলায় সালাহউদ্দিন বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, গত দুই বছরে ইউএনও জানে আলম ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। 

মামলার আরজিতে বলা হয়, অবৈধ টাকায় ইউএনও জানে আলম গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। জায়গা জমি কিনেছেন। গরুর খামার করেছেন। তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতি করেছেন। বাড়ি নির্মাণে বিভিন্ন ইট ভাটা থেকে ইট ও বালুমহাল থেকে বিনামূল্যে  বালু নিয়েছেন। এছাড়াও সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে আশ্রয়ণের বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অতি নিম্নমানের সামগ্রী। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন না হলেও তিনি সরকারিভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ দেখিয়েছেন।

আরজিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বিল-ভাউচার স্বাক্ষর করার জন্য ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন ইউএনও। টিআর-কাবিখার উন্নয়নমূলক কাজে ১০ শতাংশ কমিশন গ্রহণ করেন। এডিপির টাকায় ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ নিয়ে কমিশন নেন। এছাড়াও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জমি কেড়ে নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হলেও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ঘর দেওয়া হচ্ছে না। বরং ইউএনও টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়েছেন। যার ফলে অনেক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী টাকা না দিতে পারায় ঘর পাননি। তিনি পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়েছেন। 

 ইউএনও ঘুষের টাকা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ জানুয়ারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসানকে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে খনন কাজে ব্যবহৃত গাড়ির ইঞ্জিনের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে তাতে বালু ঢুকিয়ে অকেজো করে দেওয়া হয়। শেষে গাড়ির হেলপার আল মারুফকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে ১৫ দিনের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ইউএনও অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে গ্রামের বাড়ি যাতায়াত করেন। তিনি উপজেলা ক্যাম্পাসের আম বাগানের আম টেন্ডার ছাড়াই আত্মসাৎ করেন। একইভাবে বিভিন্ন গাছ নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। তিনি হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে উপজেলার পাকড়ি এলাকায় হাজি মানিক উল্লাহ ওয়াকফ স্টেট সম্পত্তিতে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করেছেন। একইভাবে ৮৮টি খাস পুকুর ইজারাতেও দুর্নীতি করে অবৈধ অর্থ আয় করেন। এছাড়াও নানা সময়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে তিনি অমানবিক আচারণ করেন। 

আরজিতে আরও বলা হয়, ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে সাজার সঙ্গে ১০ হাজার টাকার বেশি জরিমানা করেন। কিন্তু ধারা মোতাবেক ভ্রাম্যমাণ আদালত সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দিতে পারে।  এসব কারণে মামলার বাদী ইউএনওর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে নালিশ করেছিলেন। এর জেরে গত ১২ জানুয়ারি রাতে বাদীর প্রাইভেটকার চালক সাইফুল ইসলাম দুরুলকে ইউএনও অন্যায়ভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নানান কারণ দেখিয়ে চাঁদা গ্রহণ করেন ইউএনও। এছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দাপ্তরি নিয়োগে দুর্নীতি করেন। তার ভয়ে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে পারেন না। প্রতিবাদ করতে গেলে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার হুমকি দেন। এসব কারণে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ গ্রহণ করেনি। তাই আদালতে মামলা করা হয়েছে।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও জানে আলম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। শুধু বলব সব ভিত্তিহীন অভিযোগ।’

কেয়া/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়