ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মসজিদের নাম নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মাঝে উত্তেজনা 

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১১ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ০৯:৩৭, ১১ মার্চ ২০২৩
মসজিদের নাম নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মাঝে উত্তেজনা 

মসজিদের নাম নিয়ে দুইদল গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রঙ দিয়ে মসজিদের নাম মুছে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

শুক্রবার (১০ মার্চ) পাবনার চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের খৈরাশ বাজারের পাশেই রয়েছে একটি জামে মসজিদ ও কবরস্থান। নাম ডিকে জামে মসজিদ ও ডিকে কেন্দ্রীয় কবরস্থান। বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কমলা নদীর উত্তর-পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দিয়ার গারফা গ্রাম। নদীর ওপর পাড়ে চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ গ্রাম। এই দিয়ার গাড়ফা ও খৈরাশ গ্রামের নাম যৌথভাবে মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির নামকরণ করা হয়। পূর্বপুরুষের আমল থেকে দুটি গ্রামের বাসিন্দারা যৌথভাবে এই দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবহার করে আসছেন। 

বছর দুই আগে মসজিদটির নাম একটু পরিবর্তন করে ডিকে বায়তুশ শেফা জামে মসজিদ, খৈরাশ বাজার, চাটমোহর, পাবনা লেখা হয়। সম্প্রতি এই নাম নিয়ে  আপত্তি জানায় দিয়ার গাড়ফা গ্রামের বাসিন্দারা। তারা দাবি জানায়, মসজিদটির নাম পূর্বের নাম রাখতে অর্থাৎ ডিকে বাজার জামে মসজিদ নাম রাখতে দাবি জানায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কাছে। এই নিয়ে খৈরাশ গ্রামের প্রধানরা বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে নাম পরিবর্তন করার পর থেকে দিয়ার গারফা গ্রামের লোকজন ফুঁসে উঠতে থাকে৷ গত বৃহস্পতিবার মাইকিং করে দিয়ার গারফা গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে সভা করে। সেই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে ওই গ্রামের অন্তত ৫ শতাধিক মানুষ গিয়ে মসজিদের নাম রঙ দিয়ে মুছে দেয়। সেখানে প্রকাশ্যে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে খৈরাশ গ্রামের লোকজনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় দিয়ার গ্রামের লোকজন। সেখানে তারা জানায় যদি মসজিদের নামের সাথে খৈরাশ বাজার লেখা যাবেনা। ডিকে বাজার জামে মসজিদ লিখতে হবে। না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেইসাথে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান তারা। সবাই খৈরাশ গ্রামের লোকজনের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ এবং ডিবিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান গিয়ে দুই পক্ষের সাথে কথা বলে সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এসময় চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন, ডিবিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান শামীম হোসাইন, চাটমোহর থানার এসআই শামসুল ইসলাম ও সরোয়ার হোসেন, বড়াইগ্রাম থানার এসআই রফিকুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম, ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাফফর আলী মণ্ডল সহ দুই গ্রামের প্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

খৈরাশ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান, আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দিয়ার গারফা গ্রামের মানুষের সমস্যা তারা মসজিদের নামের সাথে খৈরাশ বাজার লিখতে দেবে না। অথচ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান কাগজে কলমে চাটমোহর উপজেলার খৈরাশ বাজারে। প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম চাটমোহর উপজেলার সাথে। খৈরাশ হাটের ইজারাও হয় চাটমোহর উপজেলা থেকে। কিন্তু এই বিষয়টি মানতে চায়না দিয়ার গাড়ফা গ্রামের লোকজন। তারা জোর করেই ডিকে বাজার অর্থাৎ দিয়ার গাড়ফা-খৈরাশ বাজার লিখতে চাচ্ছে। তারপরও আমরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই দিয়ার গাড়ফা গ্রামের লোকজন শুক্রবার সকালে এসে মসজিদের নাম রঙ দিয়ে মুছে দেয় এবং হুমকি ধামকি দেয়। আমাদের লোকজন যদি সবাই একসাথে থাকতো আর বাধা দিতো তাহলে ব্যাপক সংঘর্ষ হতো। 

দিয়ার গাড়ফা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোনাউল্লাহ বলেন, মসজিদ ও গোরস্থানে দুই গ্রামের লোকজনের অনুদান সহায়তা রয়েছে। পরিচালনা কমিটিতেও দুই গ্রামের লোকজন থাকে। পূর্বপুরুষের আমল থেকেই মসজিদেের নাম ডিকে বাজার জামে মসজিদ হিসেবে নামকরণ হয়ে আসছে। কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ করে আমাদের সাথে আলোচনা না করে কেন নাম পরিবর্তন করা হলো। আমরা গন্ডগোল চাইনা। কিন্তু খৈরাশ গ্রামের লোকজন আমাদের কথাকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই আগের নাম বহাল থাকুক।

ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম হোসাইন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক৷ আমরা দুই পক্ষকে বুঝিয়ে শান্ত করেছি৷ খুব শিগগিরই আমরা একটি দিন করে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবো। যাতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোনো ন্যাক্কারজনক ঘটনা না ঘটে।

চাটমোহর থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন, এতদিন ধরে এই সমস্যা চলছে, অথচ কেউ পুলিশকে জানায়নি, কেউ সমাধান করতে পারেনি। এর মধ্যে শুক্রবার  সকালে যেটা করা হয়েছে, সেটি খারাপ কাজ হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না। দুই থানা পুলিশ সার্কেল স্যারদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধান করা হবে। সে সময় পর্যন্ত দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

শাহীন রহমান/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়