ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জয়পুরহাটে ঘোড়ার মেলা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ১১ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৮:১৬, ১১ মার্চ ২০২৩
জয়পুরহাটে ঘোড়ার মেলা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলায় ঘোড়ার হাট জমে উঠেছে। বিজলি, কিরণমালা, রানি, সুইটিসহ নানান বাহারি নামের ঘোড়া উঠেছে সেখানে। এগুলো ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট।  

পছন্দের ঘোড়া পেতে ক্রেতাদের মধ্যেও রীতিমতো কাড়াকাড়ি। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে জয়পুরহাটে শুরু হয় মাসব্যাপী মেলা। মূল মেলা ১৩ দিন হলেও পশুর মেলা হয় ৭ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয় মেলায়। 

আয়োজকরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র ঘোড়া বেচাকেনার হাট এটি। এ কারণে বিভিন্নস্থান থেকে আনা শত শত ঘোড়া জড়ো করা হয় এখানে। একে ঘোড়ার মিলনমেলা বললেও ভুল হয় না। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর গোপীনাথপুর মেলার ঘোড়ার হাট। দরদাম ঠিকঠাকের পর খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌঁড়। 

দোল পূর্ণিমা মেলা কমিটি জানায়, ৫১৪ বছরের পুরনো এ মেলা শুরু থেকে ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসতো। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় আসেন।

স্থানীয়রা জানান, এ মেলায় ময়মনসিংহ, জামালপুর টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়ার আমদানি হয়। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে আসা ইমরান হোসেন একটি ঘোড়ার দাম হেঁকেছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরে তা দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেন। 

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাবিরাট গ্রামের আমজাদ আলী জানান, তিনি ২৫ বছর ধরে মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন। এবার তিনি পাঁচটি ঘোড়া এনেছিলেন, ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় সব বিক্রি করেছেন।

এবার হাটে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকায় যে ঘোড়াটি বিক্রি হয়েছে, তার মালিক আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ‘ঘোড়াটির বয়স সাড়ে চার বছর। এটি রেসিং ঘোড়া। দ্রুত দৌঁড়াতে পারে। সাদা-কালো ডোরাকাটা ঘোড়াটির যত্ন আমি নিজেই নিতাম। বাহারি ঘোড়াটি কিনেছেন রাজশাহীর সেকেন্দার আলী নামে এক সৌখিন ঘোর সওয়ারি।’ 

নাটোরের সিংড়া উপজেলার দমদমা গ্রামের আব্দুল হানিফ প্রায় সাড়ে আট ফুট উচ্চতার বড় কালো রঙের তেজি ঘোড়া ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

ঘোড় সওয়ারি ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আগে তাদের বাপ-দাদারা এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করতেন, পূর্ব পুরুষের সূত্র ধরে তারাও আগলে রেখেছেন সেই পারিবারিক ঐতিহ্য। আগে ঘোড়ার হাট ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঘোর দৌড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ থাকলেও বর্তমানে সেই স্থান সংকুচিত করা হয়েছে বলে ঘোড়া বেচাকেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

গোপীনাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির প্রধান কর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এত বড় পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মেলা উপলক্ষে বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন রয়েছে।
 

শামীম/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়