ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাসপাতালে এক্স-রে ফিল্ম সঙ্কট: রোগীর স্বজনরা বিপাকে

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, নীলফামারী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ১২ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১২:৩৩, ১২ মার্চ ২০২৩
হাসপাতালে এক্স-রে ফিল্ম সঙ্কট: রোগীর স্বজনরা বিপাকে

নীলফামারীতে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এক্স-রে ফিল্মের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এরফলে এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা বিভিন্ন রোগ নির্নয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক থেকে চড়া মূল্যে এক্স-রে করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ রোগীর স্বজনরা। 

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এক্স-রে ফিল্মের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফিল্ম সংগ্রহের জন্য গত একমাস আগে টেন্ডার আহব্বান করা হয়েছে। কিন্ত তা সরবারহে কোনো ধরনের নিশ্চিয়তা নেই। এছাড়াও রয়েছে হাসপাতালে ওষুধের সঙ্কট। 

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে সংগলশী গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী বাবুল ইসলাম জানান, বুকের ব্যাথায় গত তিনদিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসক আমাকে বুকের এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। পরে হাসপাতালের এক্স-রে রুমের একজন বলেন, এখানে ফিল্ম নেই। বাইরে থেকে এক্স-রে করে নিয়ে আসেন। বাধ্য হয়ে ৭০০ টাকা দিয়ে একটি ক্লিনিকে গিয়ে এক্স-রে করে নিয়া আসি। 

তিনি আরও জানান, এতো বড় হাসপাতাল সরকার সবই দেয় কিন্ত ফিল্ম দেয় না এটা কেমন কথা। অনেকে আবার টাকার অভাবে বাইরের কোনো ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়েও এক্স-রে করাতে পারছেন না।

হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ১ নম্বর বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোমড় ব্যাথায় চিকিৎসার জন্য গত দুইদিন ধরে ভর্তি আছি। বৃহস্পতিবার সকালে ডাক্তার এক্স-রে করতে বলেন, কিন্ত শুনলাম হাসপাতালে নাকি এক্স-রে হয় না। তাই ছেলের সঙ্গে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ৬০০ টাকায় এক্স-রে করলাম। গরিব মানুষ কম পয়সায় চিকিৎসা করতে এসে লাভ কি হলো। এছাড়াও হাসপাতালের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে।’ 

মহিলা ওয়ার্ডের রোগী জেলা শহরের মাস্টার পাড়া থেকে আসা তুহিন (২২) জানান, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরে ব্যাথা পেয়েছি। তাই চিকিৎসক এক্স-রে করার পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্ত হাসপাতালে এক্স-রে রুমের লোকজন বলেন, এখানে ফিল্ম নেই। তখন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাইরে গিয়ে এক্স-রে করতে হয়েছে। সেই ক্লিনিকে দাম নিয়েছে ৬০০ টাকা। আমি গরিব মানুষ সরকারি হাসপাতলে কম টাকায় সেবা পাওয়ার আশায় ভর্তি হই। কিন্ত এখানে এক্স-রে ফিল্ম নেই, সঠিক সেবাও নেই। এসব দেখারো কেউ নেই।

জানতে চাইলে হাসপাতালের স্টোরকিপার খোরশেদ আলম বলেন, এজিথ্রোমাইসিন, টেবলেট বেকলো, টোফেন, ইউডেন প্লাস, জেন্টামাইসিন, মক্সিন ইনজেকশন, অমিপ্রাজল ইনজেকশন, ডাইক্লোফেনাক বড়ি, রেনিটিট, ফ্যামোডিন সিরাপ, বারবিট সিরাপ, অমিডন সিরাপ, ডন সিরাপ ও সিভিট সব ধরনের ভিটামিন হাসপাতালে সাপ্লাই নেই। এছাড়া আইভি ক্যানুলা এক মাস ধরে সরবারহ নেই। তাহলে রোগীরা পাবে কিভাবে। 

হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফিস্ট মো. নূরুজ্জামান সরকার বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এক্স-রে ফিল্মের সঙ্কট চলছে। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীরা বড় ধরনের বিপাকে পড়েছেন। এখানে প্রকারভেদে সরকারিভাবে প্রতিটি এক্স-রে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। অথচ বাইরের ক্লিনিকে রোগীরা চড়া মূলে এসব এক্স-রে করছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্যার টেন্ডার আহব্বান করছেন। আশা করি দুই-একদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. গোলাম রসুল রাখিকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া না যাওয়ায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ জহিরুল করিম মুঠোফোনে বলেন, এক্স-রে ফিল্মের সঙ্কট আছে কি না তা আমি জানি না। আপনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলেন। 

হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, এক্স-রে ফিল্মমের জন্য এক মাস আগে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। কিন্ত এখনো অনুমোদন (খবর) পাইনি। টেন্ডার পেলে সঙ্কট কেটে যাবে। আগের কিছু ফিল্ম ছিল সেগুলো দুইদিন আগে শেষ হয়েছে। তাই রোগীরা বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে এক্স-রে করছেন। এখানে আমার কিছুই করার নেই।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়