ঢাকা     শুক্রবার   ০২ জুন ২০২৩ ||  জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

ডাক্তার নন কিন্তু দেন প্রেসক্রিপশন, করান এক্স-রে

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫২, ২৩ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ২১:২০, ২৩ মার্চ ২০২৩
ডাক্তার নন কিন্তু দেন প্রেসক্রিপশন, করান এক্স-রে

আবুল খায়ের। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করেন চিকিৎসা খাতে। তিনি ডাক্তার নন। তবে দীর্ঘদিনের ফার্মেসি দোকানের অভিজ্ঞতা দিয়ে রাতারাতি করে ফেলেন কুমিল্লার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের সুয়াগাজী বাজারে সুয়াগাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে ডাক্তার না থাকায় তিনি নিজে প্রেসক্রিপশন দেন।

সুয়াগাজী ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে নারীদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ রয়েছে আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তার প্রতিষ্ঠানের কেউ অথবা স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। 

সোমবার (২০ মার্চ) আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় কু-প্রস্তাবে রাজি না হাওয়ায় তার কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর ও শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ করেন ওই ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের সাবেক নারী কর্মী।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২২ মার্চ) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আবুল খায়ের নিজে ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন। ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন শতাধিক নারী রোগী। তবে সেখানে ডাক্তার নেই। দুই-একজন আয়া ও নারী অফিস সহকারীরা প্রেসক্রিপশন করছেন রোগীদের। দিচ্ছেন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন আবুল খায়ের নিজে। প্রেসক্রিপশনে ভুয়া স্বাক্ষরটির ব্যাপারে আবুল খায়ের স্বীকারও করেন।

প্রেসক্রিপশন করা নারী কর্মী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এখানে ডাক্তার নেই। রোগীর চাপ থাকায় আমি আর খায়ের স্যার রোগী দেখছি। তবে রোজা শুরু হলে ডাক্তার আসবে।’ 

আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে একাধিক নারী রোগী ও তার কর্মীরা অভিযোগ করেন, তিনি ডাক্তার সেজে নিজে প্রতিনিয়ত রোগী দেখেন। এতে অনেক নারী রোগী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক নারী রোগীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে চেক-আপ করেন বলেও কয়েকজন অভিযোগ করেন। 

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার এক তরুণী বলেন, ‘ওই ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে আমি আট মাস চাকরি করেছি। বেতন চাইলে খায়ের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে শরীরে হাত দিতেন। আমার কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলতেন। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে মেরে জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। আমি কয়েক মাস আগে ভয়ে পালিয়ে এসেছি।’ 

অভিযুক্ত আবুল খায়ের বলেন, ‘আমার নামে যত অভিযোগ তার কোনো প্রমাণ নেই। আমার নামে সবাই মিথ্যা অভিযোগ করছে। থানার ওসি ও এসআই আমার কাছে এসে বসে থাকে। তারাও আমার সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো ধারণা রাখে। আমি অপরাধী নই।’  

এক নারী অভিযোগ করার পর তার মাকে এক হাসপাতালে আটক করে রাখা এবং ওই নারীকে হত্যার হুমকি দিয়ে থানা থেকে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে— এ বিষয় জানতে চাইলে কথা এড়িয়ে যান তিনি।  

এ ছাড়া হাসপাতালের অনিয়মের বিষয় খায়ের বলেন, ‘ডাক্তার  হাত-পা ভেঙে বাসায় আছে। তাহলে আমি কি করব? রোগীরা আমার কাছে এসে বসে থাকে। যেহেতু এই লাইনে আমি দীর্ঘ বছর অভিজ্ঞ, তাই সেই অভিজ্ঞতার আলোকে রোগীদের যতটুকু ভালো হয়; সেই চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’ 

এক রোগীকে নিজে এক্স-রে করাচ্ছেন, সেই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এই এক্স-রের বিষয়েও আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাকে রোগীরা ভালোবাসে, তাই আমার কাছে এক্স-রে করায়। এক্স-রে টেকনিশিয়ান এখন না থাকাতে আমি এক্স-রে করে থাকি।’ 
 
সদর দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে ভয়-ভীতির কারণে অভিযোগ তুলে নিয়েছে তা আমার জানা নেই।’

সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীস ঘোষ বলেন, ‘সুয়াগাজী ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করতে কিছুক্ষণ পরে যাব।’

কুমিল্লা জেলা সির্ভিল সার্জন নাছিমা আক্তার বলেন, ‘এমন কাজ করে থাকলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
 

রুবেল/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়