ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হোলি আর্টিজানের ফাঁসির আসামিকে আনা হচ্ছে, সাক্ষীরা আসছেন না

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৭, ৩০ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ২০:৩১, ৩০ মার্চ ২০২৩
হোলি আর্টিজানের ফাঁসির আসামিকে আনা হচ্ছে, সাক্ষীরা আসছেন না

ছবি: সংগৃহীত

একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দুর্ধর্ষ জঙ্গি আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজকে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। কিন্তু মামলার সাক্ষীরা নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। ফলে আদালত আবার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন পিছিয়ে দিচ্ছেন।

সোহেল মাহফুজ সাত বছর আগে রাজধানীর হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি। রাজশাহীর তানোর থানার একটি মামলার আসামি তিনি। মামলাটি এখন রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে সোহেল মাহফুজকে রাজশাহীতে আনতে হয়।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে রেখে মামলার নির্ধারিত তারিখে আদালতে তোলা হয়। তবে পর পর তিনটি নির্ধারিত তারিখে সাক্ষ্য দিতে আসেননি সাক্ষীরা। ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর সোহেল মাহফুজকে রাজশাহী আনার বিষয়টি সবাইকেই ভাবায়। নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাও। কিন্তু সাক্ষীরা না আসার কারণে সবই পণ্ডশ্রম হয়ে যায়। সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় মামলার বিচারকাজও বিলম্বিত হচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুধবার এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এদিন কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য আগেই সমন পাঠানো হলেও সাক্ষীরা আসেননি। অবশ্য আদালতের পেশকার অসুস্থ থাকার কারণে এদিন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমও চলেনি। বুধবারের মামলাগুলোর শুধু পরবর্তী তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাশিমপুর থেকে আনার পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সোহেল মাহফুজকে রাখা হয়েছিল আদালতে তোলার জন্য। আদালত না বসার কারণে তাকে আদালতে নেওয়া হয়নি।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ১২ জুন তানোর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের রমজান আলীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। বাড়িটি থেকে রমজানসহ আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন রমজানের ছেলে ইসরাফিল আলম এবং ইসরাফিলের স্ত্রী রুমেসা বেগমও। দুর্ধর্ষ জঙ্গি হাতকাটা সোহেল মাহফুজ এই রুমেসা বেগমের দুলাভাই। পুলিশ বাড়িতে সেদিন সোহেল মাহফুজকে না পেলেও পেয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র এবং সুইসাইডাল ভেস্ট। এ নিয়ে মামলা হলে পুলিশ সোহেল মাহফুজসহ আট জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে অভিযোগপত্র দেয়।

এ মামলায় মোট ২৫ জন সাক্ষী আছেন। এরমধ্যে আট জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অভিযোগ গঠনের পর গত বছরের ১৭ এপ্রিল প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী পুলিশের পিএসআই জাহেদুল ইসলাম খন্দকার। এরপর ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট চার জন এবং চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তিন জন সাক্ষ্য দেন। ২৪ জানুয়ারির পর তিনটি নির্ধারিত দিন পার হলেও কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেননি। ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মামলাটির ধার্য তারিখ পেরিয়েছে ২১টি।

রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, সাক্ষীরা নির্ধারিত দিনে সাক্ষ্য দিতে না এলে বিচারকাজ বিলম্বিত হয়। আদালত সমন জারি করার পর সাক্ষীকে হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশের মাধ্যমেই সমন পাঠানো হয়। যেসব মামলাগুলো বড় এবং আসামিরা দুর্ধর্ষ তাদের ক্ষেত্রে পুলিশকেই সতর্কতার সাথে আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে হয়। তাই এই মামলাগুলোর সাক্ষীরা যেন নির্ধারিত দিনে হাজির হন সেটা পুলিশেরই নিশ্চিত করা উচিত।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম বলেন, কোন মামলার কে সাক্ষী ছিল সেটা না দেখে তিনি কথা বলতে পারবেন না। তবে আদালত থেকে যেসব সমন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসে, সেগুলো সময়মতই সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। থানাগুলো তা সাক্ষীদের কাছে পৌঁছে দেয়।

উল্লেখ্য, বাদী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে না আসায় রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করেন। আদালত আট বার সমন পাঠালেও এনামুল হক নামে পুলিশের এই উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাক্ষ্য দিতে আসেননি। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর এলে বাদী আইনে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানা করেন।

কেয়া/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়