ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুন্সীগঞ্জে ১০ টাকায় ইফতার বাজার

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ৩১ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৬:৩৯, ৩১ মার্চ ২০২৩
মুন্সীগঞ্জে ১০ টাকায় ইফতার বাজার

রমজান মাসকে ঘিরে নিত্যপণ্যের দামে যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন’।

সুবিধাভোগী আয়শা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘রমজানের আগের দিন এক বাড়ি থেকে কিছু ইফতার পেয়েছিলাম। মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে, তার শ্বশুরবাড়ি ইফতার না দিলে মেয়ে ছোট হয়ে যাবে। পরে সেই ইফতার এবং ঋণ করে এক হাজার টাকা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি দিয়ে এসেছি। এরপর থেকে শুধু পানি আর মুড়ি দিয়ে ইফতার করেছি। আজ ১০ টাকায় সাত প্রকার ইফতারসামগ্রী পেলাম। আশা করি রমজানের বাকি দিনগুলো ভালো কাটবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু আয়শা বেগম নয়, তার মতো আরও অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই ইফতার বাজার আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এমন আয়োজনে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া বাজারে দ্বিতীয়বারের মতো ‘১০ টাকায় ইফতার বাজার’ নামক ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

অস্থায়ী বাজার থেকে ১০ টাকায় এক কেজি তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারে ৭টি পণ্য কিনে নেন নিম্ন আয়ের ২১০টি পরিবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, অস্থায়ী এই বাজারের ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্য সব বাজারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ পছন্দমতো পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সেগুলোর দাম রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা।

রাউৎভোগ এলাকার রোকসানা বেগম বলেন, ‘পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনে খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কত কিছু কিনে নিলাম। যা দিয়া বাকি রমজানগুলো কাটিয়ে দিতে পারমু।’

দিঘীরপাড় গ্রামের নাছিমা বেগম বলেন, ‘বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা, সেখানে ৭টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। এখানে এসে মনে হলো বাপ-দাদার আমলের অল্প টাকায় আমরা বাজার থেকেই পণ্য নিচ্ছি। রোজার বাকি দিনগুলো ভালোভাবে কাটবে।’

সংগঠনের সদস্য রিয়া মনি বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও আমরা ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করেছি। এ বাজার থেকে নিম্নবিত্ত ২১০টি পরিবার বাজার করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাইলে ইফতারসামগ্রীগুলো তাদের বিনামূল্যে দেওয়া যেত। তবে সংগঠনের সদস্যরা চান, তারা সামান্য মূল্যে ক্রয় করুক। এতে তাদের আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে। পাশাপাশি বাজার থেকে ক্রয় করার মতো একটি অনুভূতি লাভ করবেন।’

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে এই অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে, সেটিই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।’

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাসি দেখে আনন্দিত হয়েছি।’

রতন/কেআই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়