ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হত্যার পর গৃহবধূর লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলা হয়: পিবিআই

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ২১:২২, ১ এপ্রিল ২০২৩
হত্যার পর গৃহবধূর লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলা হয়: পিবিআই

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জনি আক্তার রুপা (২০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। প্রায় তিন মাস পর ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রুপার সাবেক স্বামী মো. মোজাম্মেল হক (৩২) ও তার বড় ভাই মো. জহির আলী (৩৯)। তারা জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার হিমারদীঘি গ্রামের সোহরাব প্রামাণিকের ছেলে।

জনি আক্তার রুপা জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ফাজিলপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। তিনি তার স্বামী গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালীগাঁও গ্রামের উজ্জ্বল মিয়ার সঙ্গে বসবাস করতেন।

গাজীপুর পিবিআইয়ের উপ-পুলিশ (এসআই) পরিদর্শক সনজিৎ বিশ্বাস জানান, ২০১৫ সালে মোজাম্মেল হক ও জনি আক্তার রুপার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। পরে পারিবারিক ও আর্থিক অভাব অনটনের কারণে মোজাম্মেল মালয়েশিয়া চলে যায়। দীর্ঘ চার বছর মালয়েশিয়া থাকাকালে মোজাম্মেল জনি আক্তার রুপার মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৯ লাখ টাকা পাঠান।

২০২২ সালে দেশে ফিরে এসে তার পাঠানো টাকার বিষয়ে রুপা ও তার মায়ের কাছে জানতে চাইলে তারা টাকার কোনও হিসাব দিতে পারেনি। পরবর্তীতে পারিবারিক মীমাংসায় মোজাম্মেলকে রুপার পরিবার দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এসব নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দেখা দিলে দুই সন্তানকে স্বামীর কাছে রেখে রুপা গোপনে (মোজাম্মেল হকের বোনের সতিনের ছেলে) জামালপুরের ইসলামপুর থানার চিনাডুলি গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে মো. উজ্জ্বল মিয়ার (২৬) সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বালীগাঁও গ্রামে বসবাস করতে থাকেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে এসআই আরও জানান, ওই ঘটনায় মোজাম্মেল হক সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিধায় প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রুপাকে তাদের দুই সন্তানের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য নিজ গ্রামে আসার অনুরোধ করেন। পরে রুপা গাজীপুর থেকে মোজাম্মেলের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে রুপা জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌঁছার পর মোজাম্মেল তাকে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিসিভ করেন। পরে তাকে নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর চরে তার এক বন্ধুর বাসায় বসে আলাপ আলোচনা করার জন্য রওনা করেন। মোজাম্মেল পূর্বেই তার বড় ভাই জহির আলীকে একটি নৌকা নিয়ে মাদারগঞ্জ থানার জামথৈল ঘাটে আসতে বলেন। চরে যাওয়ার পর দুই ভাই রুপাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মোজাম্মেল তার সঙ্গে আনা দা দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ বালু ভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেন।

এদিকে, স্ত্রীর খোঁজ না পেয়ে রুপার স্বামী উজ্জ্বল মিয়া বাদী হয়ে ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে গাজীপুরের পিবিআই পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলাটির তদন্ত করে ৩০ মার্চ গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে।

গত ৩১ মার্চ অভিযুক্ত দুজন গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের বিচারক শাকিল আহমেদের নির্দেশে তাদের গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রফিক/কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়