ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাদ্রাসার শিশুদের কারণে একটি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা! 

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ২ এপ্রিল ২০২৩  
মাদ্রাসার শিশুদের কারণে একটি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা! 

তখন বিকাল চারটা ২৭ মিনিট একের পর এক জোরেসোরে হুইসেল বাজিয়ে ময়মনসিংহগামী মালবাহী ট্রেন আসছে। রেলক্রসিংয়ের পাশে স্থানীয় এতিমখানার মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী মাদ্রাসার টাকা উঠানোর কাজ করছিলো। একের পর এক ট্রেনের হুইসেল বাজলেও রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বে থাকা গেটম্যান জসিম তখনও আড্ডায় মত্ত। 

এদিকে শ্রীপুর-বরমীর এই আঞ্চলিক সংযোগ সড়কে একের পর এক গণপরিবহন যাতায়াত করছে। রেলগেটের সিগনাল তখনও পড়েনি দেখে চলছে ছোট-বড় পরিবহনের প্রতিযোগিতা। ট্রেনের হুইসেল যেন কোনো পরিবহনের চালক যাত্রীদের কানে যাচ্ছে না। নিশ্চিত দুর্ঘটনায় হাত থেকে রক্ষা করতে বেশ কয়েকটি পরিবহন দুপাশে ডাকাডাকি করে থামিয়ে দেন এতিমখানা মাদ্রাসার ছাত্ররা। 

গতকাল শনিবার (১ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ রেল লাইনের শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশে ঘুন্টিঘর রেলক্রসিংয়ে এ ঘটনা ঘটে।

গাড়ারন শাহু হুসানিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাউসার মাহমুদ জানায়, একের পর এক হুইসেল দিয়ে একটি ট্রেন আসছিলো। আমরা বেশ কয়েকজন মিলে মাদ্রাসার টাকা উঠাচ্ছিলাম। ঠিক এই সময় গেটম্যান ছিলো না তার ঘরে। দু'দিক থেকে একের পর এক গণপরিবহন যাতায়াত করছে। ট্রেন দ্রুত গতিতে একেবারে কাছে চলে আসলেও তারা যাতায়াত করছে। এমন সময় একটি পোশাক শ্রমিকবাহী বাস প্রায় রেল লাইনে উঠিয়ে দেয় এরপর আমরা ট্রেন আসছে ট্রেন আসছে বলে ডাক চিৎকার করে তাদের থামাই। তবে কোন কারখানার শ্রমিকবাহী বাস তা বলতে পারবো না। এর অনেক সময় পর গেটম্যান এসে তড়িঘড়ি করে সিগনাল নামায়। ততক্ষণে ট্রেন সিগনাল পার হয়ে চলে যায়। আমরা না থাকলে বেশ কয়েকটি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হতো। 

স্থানীয় মোহাম্মদ আলী জিসান বিল্লাহ বলেন, আমি বাড়ি যাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি মাদ্রাসার ছোট ছোট শিক্ষার্থী ডাকাডাকি করে গাড়ি আটকাচ্ছে। এরপর আমিও ডাক চিৎকার শুরু করি পরবর্তীতে পাশে আড্ডা দেয়া গেটম্যান এসে সিগনাল নামানোর চেষ্টা করে ততক্ষণে ট্রেন সিগনাল পার হয়ে দ্রুত চলে যায়। 

জুবায়ের হোসেন নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, আমি বাড়ি যাওয়ার পথে বিষয়টি জানতে পারি। এরকম দায়িত্ব অবহেলার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা ছিলো। এখানে একটি বাঁক থাকার কারণে দূর থেকে রেল লাইন দেখতে পায়না পাকা সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা। মাদ্রাসার ছোট্ট শিশুদের জন্য আজ বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন যাত্রীরা।

ঘুন্টিঘর রেল গেইটের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসময় কোন ট্রেন আসার কথা না। হঠাৎ করে ট্রেন চলে আসছে। আমি দৌড়ে এসে গেইট নামাই। এটি একটি মালামাল পরিবহনের ট্রেন ছিলো। আমি পাশের বাড়িতে অজু করতে গিয়েছিলাম। তাছাড়া এই গেইটে কোন ধরনের টেলিফোনে যোগাযোগ বা মোবাইল যোগাযোগ নেই। 

আপনি তো পাশে বসে গল্প করছিলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বললো। এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন গেইটম্যান বলেন, এই যাত্রায় মাফ করে দেন।

শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, আমি ছুটিতে আছি। অন্য একজন দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি জানা ছিল না, জানলাম। দায়িত্ব পালনে এধরণের অবহেলা দুঃখজনক। তার অবহেলার জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিলো। এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সর্তকতায় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

রফিক/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়