ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তাপপ্রবাহ ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়ের জনজীবন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৮ জুন ২০২৩  
তাপপ্রবাহ ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়ের জনজীবন

প্রখর রোদে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকছে

কাঠফাটা রোদ, বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে হাঁসফাঁস অবস্থা জনজীবনে। অসহনীয় এ পরিস্থিতিতে নাজেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মানুষের। শ্রমজীবী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষগুলো পড়েছে বিপদে। গরমের কারণে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া-আমাশয়-জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব।

মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা তাপপ্রবাহের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তারা। অনেকে প্রয়োজন ছাড়া রোদে বের হচ্ছে না। আবহাওয়া উত্তপ্ত থাকার কারণে গাছতলা, ঘরের ফ্যানের বাতাসেও স্বস্তি মিলছে না বলে জানান অনেকে।

জেলা শহরের ভ্যান চালক শাহিদ হোসেন বলেন, ‘তীব্র গরমে ভ্যান চালানো যায় না। রোদের খুব তেজ, গরমও তীব্র। তার সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ভ্যান সারারাত চার্জ দিতে পারলে সারা দিন চালাতে পারি। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ভ্যানও চার্জ দিতে পারছি না। এতে না পারছি ঠিকমতো ভ্যান চালাতে, আর না পারছি রাতে শান্তিমতো ঘুমাতে।’ 

গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছেন রোগীরাও। হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। বিদ্যুতের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন রোগীরাও। বেশ কয়েকজন রোগী জানান, প্রচণ্ড গরম, তার মধ্যে ঘন ঘন কারেন্ট চলে যাচ্ছে। খুব অসহনীয় অবস্থায় তারা।

লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারণে নষ্ট হচ্ছে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ অনেক ইলেকট্রনিক সামগ্রী। টিভি মেরামত করা দোকানগুলোতে দেখা যায়, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক জিনিসগুলো মেরামত করতে আনছেন। তারা বলছেন, এমনিতে কারেন্ট থাকছে না, তার মধ্যে লো-ভোল্টে। লোডশেডিংয়ের পর হঠাৎ করে লাইন আসায় ভোল্টেজ বাড়ার কারণেও সমস্যা হচ্ছে, লো-ভোলটেজের কারণেও সমস্যা হচ্ছে।

প্রখর রোদের কারণে গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিনও (পিচ)। পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কে (এশিয়া হাইওয়ে) চলমান সংস্কার কাজে সড়কের বিটুমিন গলে যেতে দেখা গেছে। যানবাহনের চাকায় পিচ আটকে যাওয়ায় চালকরা ধীর গতিতে যানবাহন চালাচ্ছে। সড়ক পিচ্ছিল হয়ে উঠায় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সড়ক বিভাগ রাস্তায় মোটা বালি ছিটিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

এদিকে গরমের কারণে হাসপাতালগগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়ের মতো রোগ ব্যাধি। প্রতিদিনই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে জেলার হাসপাতালগুলোতে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে তথ্য নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে গরমের কারণে দুই শতাধিক মানুষ ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন, প্রচন্ড গরম, রোটা ভাইরাস ও ফুড পয়জনিংজনিত কারণে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এ জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বেশি বেশি তরল খাবার দিতে হবে। এছাড়াও খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (অতি.) আব্দুল মান্নান দেওয়ান বলেন, ‘আপনারা সবাই অবগত যে এটা জাতীয় সমস্যা। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আশা করছি, সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’ 

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেল ৩টায় জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গরমের তীব্রতা পুরো এ সপ্তাহ চলতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
 

নাঈম/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়