ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গাজীপুরে খেয়াল-খুশিমতো চলছে ২ সহস্রাধিক কেজি স্কুল 

রেজাউল করিম, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:০২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গাজীপুরে খেয়াল-খুশিমতো চলছে ২ সহস্রাধিক কেজি স্কুল 

কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের ওপর সারা বছরই থাকে পরীক্ষার বাড়তি চাপ

গাজীপুর জেলায় কোনো ধরনের নীতিমালা না মেনে খেয়াল-খুশিমতো চলছে ২ হাজার ২৭৪টি কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল। বেতন ও ফি নির্ধারণ, ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়াসহ বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম চলে নিজেদের সুবিধামতো। এ স্কুলগুলোতে প্রাথমিক শাখায় শিক্ষার্থী ৩ লাখের বেশি।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই খেলার মাঠ। নেই সংস্কৃতির চর্চা। এমনকি গাওয়া হয় না জাতীয় সঙ্গীত। নির্দিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানের আগে টানা কয়েকদিন রিহার্সেল করে কোনোরকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। 

অর্ধশত স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাসিক বেতন ও সেশন চার্জ ধার্যের ক্ষেত্রে চলে একে-অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। ইচ্ছেমতো নেওয়া হয় পরীক্ষা। অল্প নম্বরের পরীক্ষার জন্য ফি নেওয়া হয় অনেক বেশি। স্কুল পরিচালনা করে মালিকপক্ষ লাভবান হলেও ন্যায্য বেতন পান না শিক্ষকরা। ফলে, তারা প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে যেতে উৎসাহ দেন শিক্ষার্থীদের। 

ছোট জায়গা ভাড়া নিয়ে আলো-বাতাসহীন ভবনে চলে ক্লাস-পরীক্ষা। গ্রন্থাগার, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলায় ১ হাজার ১১টি, টঙ্গীতে ২৩৫টি, কালিয়াকৈরে ৩৭২টি, কাপাসিয়ায় ২০০টি, কালীগঞ্জে ১৪৬টি এবং শ্রীপুর উপজেলায় ৩১০টি কেজি স্কুল আছে। তালিকার বাইরেও আছে এ ধরনের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

২০২৩ সালে গাজীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৪৫ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪০৪ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৯৫ হাজার ৯৪৬ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৯২ হাজার ৩৪৬ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৪ হাজার ৩৩১ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৯০ হাজার ৩৪৪ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৭৯ হাজার ৫৭৪ জন । তাদের মধ্যে ৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে কেজি স্কুলে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ কেজি স্কুলে শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। অল্প সংখ্যক স্কুলের রেজাল্ট ভালো হলেও অধিকাংশ স্কুলেই দায়সারা ভাব। অথচ, সেসব স্কুলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ছাড়িয়ে দেওয়া হয় দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান। তারা বিভিন্ন স্কুলের নামে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। ফলে, নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। ক্লাস টেস্ট, মাসিক পরীক্ষার বাইরেও নেওয়া হয় চারটি সাময়িক পরীক্ষা। ফলে, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ওপর সারা বছরই থাকে পরীক্ষার বাড়তি চাপ। বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারে প্রায় প্রতিটি ক্লাসে পড়ানো হয় অতিরিক্ত বই। বেশি দামে এসব বই কিনতে বাধ্য হন অভিভাবকরা।  

বিভিন্ন কেজি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেতন ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। নারী শিক্ষকদের বেতন আরও কম। ফলে, সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং করান তারা। 

একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই মানের পড়াশোনা থাকলেও প্রতিষ্ঠানভেদে শিক্ষার্থীদের খরচে পার্থক্য আছে। অনেকটা কাঁচাবাজারের মতো, যার কাছে থেকে যেমন নেওয়া যায়। এছাড়া, স্কুল পছন্দ না হলে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় সমস্যায়। কখনো কখনো পুরো বছরের ফি পরিশোধ করে স্কুল পরিবর্তন করতে হয়। 

কেজি স্কুলগুলো নিয়ে গাজীপুরে একাধিক সংগঠন আছে। এসব সংগঠন গঠনের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে তেমন সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। 

সংগঠনগুলোর কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে গাজীপুর কেজি স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদর রহমান বলেন, আমাদের সংগঠনের অধীনে ১ হাজার ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। আমাদের উদ্দেশ্য—প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ করা। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া বলেছেন, কেজি স্কুলগুলোকে একটি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসার কাজ চলছে। মোটামুটি সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তথ্য মোটামুটি দিয়েছে। অনেক স্কুল আছে, যারা ইচ্ছামতো বইয়ের চাহিদা দিয়ে বই সংগ্রহ করতেন। এখন আর সেটি পারবেন না।  

/রফিক/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়