চাঁপাইনবাবগঞ্জে যত্রতত্র এলপি গ্যাস-পেট্রোল বিক্রি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার এবং পেট্রোলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনুমোদনহীন একাধিক দোকানে এ পদার্থ বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে, শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্প্রতি অনুমোদনহীন দাহ্য পদার্থ বিক্রির একাধিক স্থান ঘুরে দেখা গেছে, যত্রতত্র অবাধে বেচাকেনা চলছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার এবং পেট্রোলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। দোকানপাটে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে মূল্য রাখা হচ্ছে সরকারি মূল্যের চেয়েও ২০০-২৫০ টাকা বেশি। এছাড়াও কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই পাড়ায়-মহল্লায় ভ্যানে করে বিক্রি করা হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। এক লিটার কিংবা দুই লিটার প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল ভরে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি পেট্রোল কিনতে পারছে। অথচ দাহ্য পদার্থ পেট্রোল বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল ও মবিল বিক্রির জন্য অন্তত ফ্লোর পাকাসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। এসব শর্ত মানলে একজন ব্যবসায়ী বিস্ফোরক লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। কিন্তু এ সব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না ব্যবসায়ীরা।
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ ধরনের প্রায় ৫ শতাধিক দোকান রয়েছে। তারা এক লিটার পানির বোতলে পেট্রোল বিক্রির পাশাপাশি দাহ্য পদার্থ বিক্রি করছেন। অনেক দোকানে আবার সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। কোনো নিয়ম না মেনে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, আবার কেউ অনুমোদন ও অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স ছাড়াই জ্বালানি তেলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হরহামেশে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। আর সেই যন্ত্র না থাকায় যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও জানা নেই এসব ব্যবসায়ীদের। গ্রামাঞ্চলে ছোটবড় বাজারে অবাধে এলপি গ্যাস বিক্রি হলেও দেখার যেন কেউ নেই। বাসা বাড়িতে এলপি গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যত্রতত্র নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে তা বিক্রি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলা এক দাহ্য পদার্থ বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। রাস্তার পাশে পসরা দোকান বসিয়েছি। দোকানে মুদি পণ্য বিক্রির পাশাপাশি টুকটাক তেল বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালাই। আমরা এসব আইন সম্পর্কে কিছুই জানি না। এসব নিয়ে প্রশাসনের কেউ কিছু বলেনি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মুনিরুজ্জামান মুনির জানান, যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার এবং পেট্রোলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। দুর্ভোগের সময়ে মানুষের প্রয়োজন হলেও এভাবে এসব দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা ঠিক নয়। যখন তখন বড় ধরণের বিস্ফোরণের ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। যারা ব্যবসায়ী আছে তারা অনুমোদন নিয়ে বিক্রি করতে পারে, এতে কোনো ধরণের সমস্যা হবে না।
হরহামেশায় এসব পদার্থ বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের কোন ধরনের প্রচারণা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। অনুমোদনহীন বোতলে পেট্রাল বিক্রি করেছে এমন অসচেতন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে এমনও খবরও শুনতে পাননি বলেও জানান মুনিরুজ্জামান।
দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। যত্রতত্র বিক্রির কোনো সুযোগ নেই বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে যারা এসব ব্যবসা করছেন। শিগগিরই বাজার মনিটরিং করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিয়াম/বকুল/