ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

বগুড়া-১

মনোনয়ন চান আ.লীগের ১১ জন, সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত বিএনপি

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ২১ নভেম্বর ২০২৩  
মনোনয়ন চান আ.লীগের ১১ জন, সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য এখন পর্যন্ত ১১ জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের পর জমা দিয়েছেন। প্রত্যেকেই প্রতীক পেতে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী তাদের সবাই। তবে, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। 

এদিকে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির নেতাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাইরে নির্বাচন নিয়ে সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে দুজন নেতা দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

মনোনয়ন পত্র বিতরণের প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন পত্র উত্তোলন ও জমা দিয়েছেন তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব মুখপাত্র কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ম আব্দুর রাজ্জাক, মেধা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংবাদ সংযোগ পত্রিকার সম্পাদক শাহাজাদী আলম লিপি, প্রয়াত সংসদ সদস্য এসএম সিরাজুল ইসলাম সুরুজের ছেলে এস এম মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লবসহ ১১ জন।

বিএনপি নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামডাক বিভিন্নভাবে বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বর্তমানে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যস্ত আছেন। বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সদস্য আলহাজ্ব কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য মোশারফ হোসেন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বগুড়ার এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে মফিজ আলী চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের নির্বাচন ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে আব্দুল আলীম এরপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন মন্ডল সংসদ সদস্য হন। এরপর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন থেকে অষ্টম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের নির্বাচনগুলোতেও তিনিই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসনটি নিজের দখলে রাখেন। 

২০২০ সালে আব্দুল মান্নান মারা গেলে উপ-নির্বাচনে তার স্ত্রী শাহাদারা মান্নান শিল্পী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত আসনটির সংসদ সদস্য রয়েছেন। তবে, উপনির্বাচনে জয়ের পর থেকেই দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীর সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দলের নেতকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার কারণে দিন দিন দলের নেতাকর্মীদের কাছেই তার জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এমন কথার চাউর আছে এলাকায়।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনটিতে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬২০ জন।

কথা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামলের সঙ্গে। এই নেতা আলোচনায় আসেন বগুড়ায় শষ্যচিত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে। তার বিশেষ এই অবদান যুক্ত হয়েছে গিনেস বুকে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমি তার জন্যই কাজ করবো। আমাকে যদি দল মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করবো। মনোনয়ন পেলে আমার সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকার মূল সমস্যাই হলো বেকারত্ব। আমাদের এলাকায় কৃষক, শ্রমিকসহ ও বিভিন্ন পেশার যেসব মানুষ আছেন, তাদের পেশাগত কিছু জটিলতা আছে। যেমন- চর এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেন না। ফলে বাজার মূল্য তারা পান না। শ্রমের বাজারেরও একই অবস্থা। এখানকার মানুষের ইনকাম বাড়াতে হলে বিনিয়োগ লাগবে। সেই বিনিয়োগটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে শিল্পখাতে হতে পারে, সেবা খাতে হতে পারে এবং অবকাঠামো উন্নয়নে হতে পারে। এগুলো আমরা একটা একটা করে আসনটিতে সাজাবো এরকম পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া সারাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সারিয়াকান্দি-সোনাতলার সুষম উন্নয়ন যাতে ঘটে সেই চেষ্টা থাকবে।’

বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি এলাকায় কাজ করেছি। ২৪ ঘণ্টা এলাকাতেই থাকছি। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী যেটা করবেন সেটাতেই আলহামদুলিল্লাহ। মনোনয়ন পাওয়ার পর যদি ভোটে নির্বাচিত হই, তবে প্রধানমন্ত্রী তো পুরো বাংলাদেশেই উন্নয়ন করছেন। তিনি আমাদের এলাকারও উন্নয়ন করবেন। প্রয়াত নেতা আব্দুল মান্নান সাহেবের অসমাপ্ত কাজ মোটামুটি সমাপ্ত হয়েছে। তিনি রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শতভাগ বিদ্যুতের পরিকল্পনা করেছিলেন সেগুলো তো সবই মোটামুটি হয়ে গেছে। আড়াই হাজার কোটি টাকার নদীর কাজ করেছেন আমাদের প্রয়াত নেতা মান্নান সাহেব। এছাড়া এবার ছোটখাটো নদী ভাঙন যেগুলো হয়েছিলো এবং যেখানে যে সমস্যা হয়েছে সেগুলো ঠিক করার কাজ শুরু হয়েছে। ‍ 

এলাকায় আপনার জনপ্রিয়তা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আমি এলাকায় ছোটখাটো একটা প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে ২০ হাজারের ওপর বয়স্ক নারী পুরুষ ভোটাররা ছিলেন। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আনন্দ মিছিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারা থাকতে চান এটা তারা বলেছেন। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবো। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। 

দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কথা শোনা যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো দূরত্ব নেই। কোন সম্পর্ক খারাপ নেই। একাধিক দলীয় ব্যক্তি মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতেই পারেন। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো কেউ কাউকে পছন্দ করে তার সঙ্গে যেতেই পারেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে বাদ দিয়ে যাকেই মনোনয়ন দেবেন সব নেতাকর্মী তার সঙ্গেই থাকবে। আমিও সেই প্রার্থীর পক্ষে থাকবো।’

দলীয় মনোনয়ন পেতে গত ১ বছর ধরে এলাকায় সভা সমাবেশ করছেন শাহাজাদী আলম লিপী। তিনি বরিশাল মেট্রো পলিটনের অতিরিক্ত কমিশনার হামিদদুল আলম মিলনের স্ত্রী। শাহাজাদী আলম লিপী বলেন, নেত্রী নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার আগে মাঠের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। সেক্ষেত্রে আমার কার্যক্রমগুলোর কারণেই আমি নৌকার মনোনয়ন পাবো বলে আশাকরি। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি শতভাগ নিশ্চিত। 

তিনি আরও বলেন, আমি মানুষের ভালোর জন্য রাজনীতি করি। আমার কোনো পিছুটান নেই। আমি ব্যবসা করি। নিজে চলি এবং অন্যদেরকে চালাই। দলীয় প্রতীক পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমি প্রথমে নদী ভাঙনরোধে মনোযোগ দেবো। তারপর এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বেকারত্বদূরীকরণে কাজ শুরু করবো। 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ম আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বগুড়া জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য মোশারফ হোসেন চৌধুরী ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনের বিএনপির প্রার্থী ডা. হাবিবুর রহমানের মূল সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছিলেন। সে সময় সোনাতলা-সারিয়াকান্দির অনেক উন্নয়নের সঙ্গে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ফলে এলাকাতে তার সুনাম আগে থেকেই রয়েছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, দল যদি ইলেকশনে যেত তাহলে আমার প্ল্যান ছিলো নমিনেশন নিয়ে ইলেকশন করার। আমি দীর্ঘদিন এলাকায় কাজ করেছি। করোনা ও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুই উপজেলায় অনেক ত্রাণ দিয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এলাকার অসংখ্য ব্যক্তিকে আমি চাকরি দিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, আমরা যেহেতু এখন আন্দোলনে আছি এই মুহূর্তে আমরা নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করছি না। দলীয় সিদ্ধান্ত যেটা আসবে সেটাই আমরা মেনে নেবো। 

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা বাবু বলেন, আমি মনোনয়ন উঠাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি প্রার্থী ছিলাম। কাল মনোনয়ন উঠাবো। যদি দলের চেয়ারম্যান বলেন নির্বাচন করতে হবে তবে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। আর যদি যদি বলেন করবো না, তাহলে নির্বাচনে আমাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই।

মাসুদ

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়