ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩১

তিস্তার চরে সেচ নির্ভর চাষাবাদে ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ

জামাল বাদশা, লালমনিরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২১ নভেম্বর ২০২৩  
তিস্তার চরে সেচ নির্ভর চাষাবাদে ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ

তিস্তার বালু চরে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করছেন কৃষকরা

প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়া তিস্তার বুক চিরে জেগে উঠেছে চর। এসব চরে আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, পেয়াজ ও মরিচসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ করছেন কৃষকরা। চরে ডিজেল চালিত পানির পাম্প (শ্যালো) বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন তারা। ধুধু বালু চরে কৃষকের এই সেচ নির্ভর চাষাবাদে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।

লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার ৫ উপজেলায় জেগে ওঠা চরের জমির পরিমান ১০ হাজার হেক্টর। এ বছর চাষাবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জেগে ওঠা চরের বৃহৎ অংশই চাষাবাদের বাইরে রয়েছে এখনো। আর চাষাবাদ কৃত জমিতেও নদীতে পানি সংকট থাকায় কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বালুময় জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারো শুকিয়ে যাওয়ায় খরচ মিটিয়ে লাভবান হওয়া নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা।

আরো পড়ুন:

তিস্তা নদী প্রায় পানিশূন্য থাকায় কৃষকরা আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, যদি নদীতে পানি থাকতো তাহলে সোনালী ফসল ফলাতে তাদের কোনো বেগ পেতে হতো না। পানি না থাকায় তাদের এখন মরণদশা। ডিজেল কিনে ফসল ফলাতে তাদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক মাযাহার আলী। তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে তিস্তা নদীর বুকে ধুধু বালুচরে আলু ও লাল শাক চাষ করেছেন তিনি। আলু খেতের পানির দরকার হওয়ায় তিনি নদীর বুকে শ্যালো মেশিন বসিয়েছেন।

ফসলের জমিতে সেচ পদ্ধতির বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, কয়েকজন কৃষক মিলে আমরা একটি শ্যালো মেশিন থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করে বালু চরে চাষাবাদ করছি।

উপজেলার খুনিয়াগাছ হরিনচরের কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে ওঠা চরে নানা জাতের ফসল চাষ হয়। এবছর আমি ৬ একর জমিতে আলু লাগিয়েছি। বর্তমানে আলুর বাজারও ভালো শুনেছি। তবে, চরের চাষে সেচের বিষয়ে ব্যয় সমতল জমির চেয়ে তিনগুণ বেড়ে যায়। আলুর ফলন ভালো হলেও লাভ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি।

একই চরের কৃষক শফিক উদ্দিন এবছর প্রায় ৮ বিঘা বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। তিনি বলেন, তিস্তা নদীতে তেমন পানি প্রবাহ নেই। তাই শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তিস্তার বুকে মাত্র ৩৩-৩৫ ফুট পাইপ বসালে তারা পানি পাচ্ছেন। অনেকটা দূরে একটি চ্যানেলে তিস্তার পানির কিছুটা প্রবাহ থাকলেও সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা তাদের জন্য কষ্টকর। ফলে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনই সেচে কাজের ভরসা। ফসল উৎপাদনে খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাটের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, তিস্তা ও ধরলা নদীর বিশাল চরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার কৃষক বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। আলু, ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন করে চরের কৃষকরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। সেচের জন্য ব্যয় কিছুটা বেশি হলেও কীটনাশকের ব্যয় চরের চাষাবাদে কম লাগে। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ থাকলে কৃষকরা সেখান থেকে সেচের পানি সরবরাহ করে ফসল উৎপাদনে খরচ কমাতে পারতেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ থেকে চর কৃষকদের বালুচরে নানা ফসল উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজান থেকে পানি তুলনামূলক কম আসায় তিস্তায় পানি প্রবাহ কমেছে। বিশাল পরিমাণে পলি জমে তিস্তার বুক ভরাট হয়ে মূল-ভূখন্ডের সমান হয়ে গেছে। তাই বর্ষাকালে অল্প পানিতে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তিস্তায় যেটুকু পানি প্রবাহ আছে সেটিও ৫-৬টি চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। তিস্তা নদী খনন করে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে রূপান্তর করতে পারলে তিস্তায় পানি প্রবাহ সচল থাকবে। এতে লাভবান হবেন চরের কৃষকরা আর রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক পরিবেশও।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়