মানিকগঞ্জে-২ আসন
দলের পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে কঠিন পরীক্ষায় মমতাজ
জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
মুশফিকুর রহমান খান, শফিউল আরেফিন টুটুল, মমতাজ বেগম, জাহিদ আহম্মেদ টুলু ও সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। এই আসনে তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে ভোট ভাগাভাগি হওয়ার শঙ্কায় মমতাজ বেগম অনেকটা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মতে, আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এই আসনে একই দলের ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কম-বেশি ভোট রয়েছে। এতে একই দলের ভোট ভাগাভাগি হবে। ফলে দলীয় প্রার্থীর ভোট কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে মমতাজ বেগমের ভাষ্য, সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসেন। এ কারণে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। যারা আওয়ামী লীগের প্রকৃত কর্মী, তারা কখনই নৌকার বাইরে যেতে পারবেন না।
সিঙ্গাইর ও হরিরামপুর এবং জেলা সদরের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন। গত বৃহস্পতিবার শেষ দিন পর্যন্ত এ আসনে ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে দলীয় স্বতন্ত্র ৫ প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুশফিকুর রহমান খান, কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য সারোয়ার আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চল।
দলীয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই শক্তিশালী। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনীতি করে আসছেন। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় আওয়ামী লীগের নেতা দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল মানিকগঞ্জ-২ আসনে রাজনীতিতে অতিপরিচিত মুখ। তিনি ২০০১ সাল থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। এলাকায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তার যোগাযোগ রয়েছে। মুশফিকুর রহমান খানও এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি তিনি সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুও দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকায় মানুষজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে আসছেন। প্রায় এক বছর ধরে তিনি নির্বাচনী এলাকার মাঠচষে বেড়িয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও দলের এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাড়ি সিঙ্গাইর উপজেলায়। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চলের বাড়ি হরিরামপুর উপজেলায়। অঞ্চলভিত্তিক ভোটারের দৃষ্টি কাড়বে তরুণ এই প্রার্থী। এসব কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এস এম আবদুল মান্নানও শক্তিশালী প্রার্থী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগির কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারেন।
তবে মমতাজ বেগম বলেন, ‘নির্বাচনই হচ্ছে চাপ, নির্বাচনই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। প্রতিযোগিতা করে আসার মধ্যে আনন্দ আছে। সেই চাপ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণই নৌকাকে জয়ী করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে বিভক্তি হয়। তবে এই বিভক্তি আগে থেকেই হয়ে আসছে, সামনেও হবে। দলের জন্য যারা কষ্ট করেন, তাদের আশা-ভরসা থাকে। তবে যারা আওয়ামী লীগের প্রকৃত কর্মী তারা কখনই নৌকার বাইরে যেতে পারবেন না।’
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এহতেশাম হোসেন খান বলেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তালিকা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে পাঠানো হবে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাছাড়া আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্র প্রত্যাহারেরও সুযোগ রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞা বলেন, ভোটগ্রহণ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জেও ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। এই আসনে মোট ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, দলের স্বতন্ত্র এবং জাতীয় পার্টি ছাড়াও জাকের পার্টি, জাসদ, বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী রয়েছেন।
/টিপু/