ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে নৌকা-স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৩, ৪ জানুয়ারি ২০২৪  
সিরাজগঞ্জে নৌকা-স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে শীত উপেক্ষা করে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে যমুনা পাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জে। 

জেলার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেমন প্রচারণায় সক্রিয়, তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও পরিবর্তনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে চাচ্ছেন ভোট। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার লক্ষ্য ভোটারদের। নির্বাচন ঘিরে জেলার ৬টি আসনের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। পথসভা-উঠান বৈঠক করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনের ফলাফল নিজ নিজ পক্ষে আনতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। একই সঙ্গে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রতিদিনই পাল্টে যাচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণা ও গণসংযোগের ধরণ। দিনে-রাতে ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও বাকি তিন আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হচ্ছে নৌকা প্রার্থীদের। এসব আসনে নৌকার পাশাপাশি মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঈগল প্রতীকের প্রচারণা চলছে সমান তালে। রয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রচারণায় বাধা, সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগও।  

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদর) : স্বাধীনতার পর থেকে শহীদ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী ও তার উত্তরসূরিরাই এখানকার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। এখানে আরও তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, সাইফুল ইসলাম (জাসদ), জহুরুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি) ও সবুজ আলী (বিএনএম)। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২। পুরুষ ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫, নারী ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট ২টি। কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। নিজেদের শক্ত ঘাঁটির এ আসনে বরাবরের মতো এবারও নিশ্চিন্তে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ): জেলা সদরের মর্যাদাপূর্ণ আসনটি ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির দখলে ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম এমপি হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জান্নাত আরা হেনরী। আসনটিতে আরও ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটাই নির্ভার জান্নাত আরা হেনরী। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, আমিনুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি), আব্দুর রুবেল সরকার (জাকের পার্টি), সোহেল রানা (বিএনএম) ও সাদাকাত হোসেন খান বাবুল (ওয়ার্কাস পার্ট)। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০৭। পুরুষ ২ লাখ ২ হাজার ৭২১, নারী ২ লাখ ১ হাজার ৭৮৪ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট ২টি। মোট ভোটকেন্দ্র ১৪৫টি।

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ): উত্তরবঙ্গের শস্য ও মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ডা. আব্দুল আজিজ। একাদশ নির্বাচনে দলের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে জয় লাভ করলেও এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ঈগল পাখি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুইট। আসনটিতে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ দুই প্রার্থী ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নুরুল ইসলাম উজ্জ্বল (স্বতন্ত্র), গোলাম মোস্তফা (বিএনএম) ও জাকির হোসেন (জাতীয় পার্টি)। এই আসনে ১৫৩ ভোটকেন্দ্রে আছে। মোট ভোটার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৩। পুরুষ ২ লাখ ৮ হাজার ৪৬৩, নারী ২ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট রয়েছে ৫টি।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। তিনবার নৌকার মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। এবার কোনো বাধা না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এতে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।  ইনশাআল্লাহ ব্যাপক ভোটে জয়ী হবো।’

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া): প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। নৌকা প্রতীক পেয়েছেন নবম জাতীয় সংসদের এমপি মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি। এখানেও শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভারমুক্ত আওয়ামী লীগ। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, হিল্টন প্রামাণিক (জাতীয় পার্টি) ও মোস্তফা কামাল বকুল (জাসদ)। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪০। পুরুষ ২ লাখ ২৭ হাজার ১৪৮, নারী ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৪ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট ৮টি। ভোটকেন্দ্র ১৩৭টি।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী): আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে জেলার সবচেয়ে আলোচিত আসনটিতে অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নৌকা। টানা দ্বিতীয়বার মনোনয়ন পেয়েছেন শিল্পপতি আব্দুল মমিন মণ্ডল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হন তার বাবা আব্দুল মজিদ মণ্ডল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মজিদ মণ্ডল অসুস্থ থাকায় ছেলে মমিন মণ্ডল মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এই আসনে সাবেক ও বর্তমান একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ দলের বড় একটি অংশ সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন তারা। বিভিন্ন অভিযোগের মধ্য দিয়ে রাত-দিন জমজমাট প্রচারণা চলছে আসনটিতে। এই দুই প্রার্থী ছাড়াও ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, নাজমুল হক (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), আব্দুল্লাহ আল মামুন (স্বতন্ত্র), ফজলুল হক (স্বতন্ত্র) ও আব্দুল হাকিম (বিএনএম)। আসনটিতে ১২৪ ভোটকেন্দ্রে রয়েছে। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১। পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮২ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৭৯ জন।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘নির্বাচন করলে দলের কোনো বাধা নেই। যে কারণে জনগণ ও দলের চাপে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তৃণমূলের যত নেতাকর্মী আছে তারা প্রত্যেকেই আমাকে ভোট দিতে চান। যেখানেই যাচ্ছি গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি।’

নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, ‘এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে এবং এই নৌকাই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়বে। কিন্তু যিনি দীর্ঘদিন এখানে নৌকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন সবাইকে নিয়ে তিনিই নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। নেতাদের তিনি হতাশ করেছেন। তিনি মন্ত্রী হয়ে অনেক অপকর্ম ও দুঃশাসন করেছেন। এ কারণে সাধারণ মানুষ আজ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’   

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর): এমপি মেরিনা জাহান কবিতার পরিবর্তে তার ছোট ভাই চয়ন ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আসনটিতে সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর ঈগল প্রতীকের সঙ্গে নৌকার হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা শোনা যাচ্ছে। এখানেও নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার, মারপিট ও হুমকির একাধিক অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই আসনেও ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন, মোক্তার হোসেন (জাতীয় পার্টি), মোজাম্মেল হক (জাসদ), মোহাম্মদ শামীম (বিএনএম), তারিকুল ইসলাম (তৃণমূল বিএনপি), রেজাউর রশিদ খান (ওয়ার্কাস পার্টি) ও কাজী মো. আলামিন (সুপ্রিম পার্ট)। আসনটিতে ভোটকেন্দ্র ১৬০টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৭৭, পুরুষ ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৫০, নারী ২ লাখ ২৪ হাজার ৬২৫ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোট রয়েছে ২টি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে. এম হোসেন আলী হাসান বলেন, এই নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, এ নৌকাই পারবে মানুষকে উন্নত জীবন দিতে ও শান্তি সমৃদ্ধি দিতে। নৌকায় আপনারা ভোট দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। এবারও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবে। জেলার ৬টি আসনেই নৌকা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে ইনশাল্লাহ।
 

রাসেল/বকুল 

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়