ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

মাদারীপুর-৩ 

আ. লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ২১ অভিযোগ, ২০টিরই সুুরাহা হয়নি

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ৫ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৪, ৫ জানুয়ারি ২০২৪
আ. লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ২১ অভিযোগ, ২০টিরই সুুরাহা হয়নি

আবদুস সোবহান মিয়া ও তাহমিনা বেগম

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ২১টি লিখিত অভিযোগ করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। এর মধ্যে একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে কালকিনি ও ডাসার থানার দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হলেও অন্য অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন তাহমিনা বেগম।

তবে তাহমিনা বেগমের সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেছেন আবদুস সোবহান মিয়া।  

তাহমিনা বেগমের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি প্রচার চালালেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

এ প্রসঙ্গে মাদারীপুর জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল) মো. শরিফুল হকের আদালতে কর্মরত পেশকার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে আসা প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করে শুনানি করা হয়েছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ নির্বাচন কমিশনের আইন শাখায় পাঠানো হয়। ওখান থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসবে।’

তবে যে কয়টি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে তার একটিরও ফিরতি চিঠি এখনও আসেনি বলে জানান আনোয়ার হোসেন। 

জেলা নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার দিন থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম ২১টি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঈগলের নির্বাচনি  প্রচারণায় বোমা হামলা, কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, ক্যাম্প ভাঙচুর ও তালা দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের মারধর, ভোটারদের হুমকি দেওয়ার বিষয় আছে। 

একইভাবে তাহমিনা বেগমের বিরুদ্ধেও নৌকার প্রার্থী পাঁচটি অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের বেশির ভাগই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এই কমিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে। পরে প্রার্থী ও তাদের সমর্থক বা কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সন্তোষজনক জবাব পেলে প্রার্থী ও সমর্থকদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (আইন) শাখায় সুপারিশ পাঠানো হয়। 

তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে সুপারিশের শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার আগে থেকেই নৌকার প্রার্থী গোলাপ একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করে যাচ্ছেন। গোলাপের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন অনেকটা নির্বাক। এখন পর্যন্ত আমরা ২১টি অভিযোগ দিয়েছি। একটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে। বাকি একটিরও সুরাহা আমরা পাইনি।’

অভিযোগের বিষয়ে আবদুস সোবহান মিয়া বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিটি অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। এসব নিয়ে আমরা বিচলিত নই।’

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ‘আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে প্রার্থীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করে।  নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে আমরা প্রার্থীদের শোকজও করেছি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না- এটি আসলে সঠিক কথা নয়।’

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, ইসি থেকে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকা ও ঈগলের প্রার্থীকে সতর্ক করে নোটিশ করা হয়েছে। 

মাদারীপুর-৩ আসনে (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। তার শক্ত প্রতিদ্বদ্বী তাহমিনা বেগম সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই দুই প্রার্থী ছাড়া আরও চারটি দলের প্রার্থী এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ওই চার প্রার্থীর নির্বাচনি কোনো প্রচার চোখে পড়ছে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

বেলাল/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়