ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

তিন জেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৪২

রাইজিংবিডি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ৮ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৫, ৮ জানুয়ারি ২০২৪
তিন জেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৪২

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দেশের তিন জেলায় অন্তত ৪২ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মেধ্যে রাজশাহীতে ৩১ জন এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ১০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া, গাইবান্ধায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ ‍উঠেছে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।

রাইজিংবিডির প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

রাজশাহী: ভোটের পর রাজশাহীর তিন উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে রাজশাহী-১ আসনের তানোর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষেই ২০ জন আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে।

এছাড়া রাজশাহী-৩ আসনের নবনির্বাচিত এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের সমর্থকদের সঙ্গে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পিস্তল হাতে এক শ্রমিক লীগ নেতাকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এখানে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। রাজশাহী-৬ আসনের বাঘা উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের এক সমর্থকের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী-১ আসনের তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ফল ঘোষণার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রব্বানীর সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এলাকাটি রব্বানীর নিজের এলাকা। সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল, এ কেন্দ্রে গোলাম রাব্বানী বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। কিন্তু তা হয়নি। তাই তারা পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানান। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তা না করে ভোট বাক্স নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। এ সময় এক ঘণ্টা ধরে রাব্বানীর সমর্থকেরা কেন্দ্র ঘেরাও করে রাখেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে রাব্বানীর সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাব্বানী। ওই সংঘর্ষের সময় রাব্বানীর সমর্থকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিজিবি সদস্যরা প্রায় ১৩টি ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘর্ষে দুজন পুলিশ ও দুজন বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।’ সংঘর্ষে রাব্বানীর কোনো সমর্থক আহত হওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেননি।

রাজশাহী-৩ আসনের পবা উপজেলার পারিলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সকালে পারিলা বাজারে বর্তমান এমপি অয়েন উদ্দিন ও নবনির্বাচিত এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, রোববার ভোট চলা অবস্থায় দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় পারিলা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মুরাদ একহাতে রামদা আরেক হাতে পিস্তল নিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেন। পরে আসাদ সমর্থকদের ধাওয়ায় পালিয়ে যান। পরে আসাদ গ্রুপ তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা চালায়। সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকালে বাজারে পেয়ে আয়েন গ্রুপ আসাদের সমর্থকদের ধাওয়া দেয়। এসময় বাজারে অবস্থিত তাদের কয়েকটি দোকান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। দুই দিনের সংঘর্ষে দুইপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী জানান, ‘পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। একটা ভিডিওতে শ্রমিক লীগ নেতার হাতে রামদা দেখা গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র আছে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ সবকিছু যাচাই করছে। কোনো পক্ষ অভিযোগও করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে রাজশাহী-৬ আসনের বাঘা উপজেলায় নাটক নির্মাতা ও থিয়েটার কর্মী শিমুল সরকারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সরেরহাট এলাকায় হামলাটি হয়। শিমুল স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সমর্থক ছিলেন। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। তার মাথায় হাতুড়ির আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ভোট দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছিলেন শিমুল সরকার। রাতে ৫টি মোটরসাইকেলে ১০ জন নৌকার সমর্থক হেলমেট পরে এসে তার ওপর অতর্কিত হামলা করে। হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাতের পর তাকে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তার মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। এ ঘটনায় শিমুলের ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন থানায় একটি এজাহার দিয়ে এসেছেন।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরেরহাটে একটা ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত জানি না। আমি থানার বাইরে আছি। কোনো এজাহার দেওয়া হয়েছে কি না সেটিও জানি না। থানায় গিয়ে দেখব।’ 

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বি বুবলীর সমর্থক ও সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধ। সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার ভরতখালী বাজারে এই হামলা চালানো হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক ব্যক্তির দাফনে অংশ নিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ভরতখালি বাজারে আসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। বাঁশের লাঠি ও লোহার শাবল নিয়ে ২০/২৫ জন লোক জাহাঙ্গীরের ওপর হামলা চালায়। পরে গুরুতর অবস্থায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ধারণা, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এ হামলা চালানো হয়েছে।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তানভীর রহমান কল্লোল জানান, আহত জাহাঙ্গীরের একটি পা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। অপর পায়েরও অধিকাংশ জায়গায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। তার ডান হাতও ভেঙ্গে গেছে। হাসপাতাল থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

সাঘাটা থানার একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন দেওয়া হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

জামালপুর:  জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পরাজিত নৌকার সমর্থকদের প্রায় ১০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী স্বতন্ত্র ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার রাত থেকে সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত হওয়া এসব ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল পরাজিত হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তেঁজগাও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুর রশীদের কাছে। আবদুর রশীদের লোকজন এরপর বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। সোমবার সকালে মহাদান ইউনিয়নের বিলবালিয়া ও বনগ্রামে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তারা  নেতাকর্মীদের মারধর করেন। একই সঙ্গে বাড়ি লুট ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম অক্ষর ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক শাহীন অভিযোগ করেন, বিজয়ী প্রার্থী ‘ট্রাক’ প্রতীকের সমর্থক আলহাজ মাস্টারের নেতৃত্বে বিলবালিয়া এলাকায় নৌকা সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। নৌকার সমর্থকদের প্রাণনাশসহ বাড়িঘর ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদের সমর্থকরা কয়েকটি কেন্দ্রে সীল মেরে ভোট নিয়েছে। যারা যারা কেন্দ্রে বাঁধা দিয়েছে এবং নৌকার পক্ষে কাজ করেছে তাদের বাড়িঘরে হামলা ও মারধর করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুর রশীদের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান বলেন, যেখানে বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাচ্ছি, সেখানেই পুলিশ যাচ্ছে। ঘটনাগুলো তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিলবালিয়া গ্রামের হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে আলহাজ মাস্টার নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।

মাসুদ/কেয়া, মাসুম,সেলিম

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়