ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তাদের হাতকড়া পরাতে না পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব: খাদ্যমন্ত্রী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:২৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
তাদের হাতকড়া পরাতে না পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব: খাদ্যমন্ত্রী

‘ধানের দাম কারা বেশি চাচ্ছেন, তাদের নাম-ঠিকানা আমাকে দেন। যারা দাম বেশি চাচ্ছেন, এ সভাতে বসে যদি তাদের হাতে হাতকড়া পরাতে না পারি, তাহলে আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব। আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ দিলাম।’ 

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সর্বস্তরের চাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার একথা বলেন। 

আরো পড়ুন:

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসে জিনিসের দাম কম থাকবে আর ১১ মাস বেশি থাকবে, তা কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে। আশা করছি, আমরা সফল হবো। সব জায়গায় অভিযান শুরু হয়েছে। ধান কিনে কে রাখে, মজুত কে করে সেটা জানতে অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা সাকসেসফুল হয়েছি। চালের দাম হঠাৎ করে যেটা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যদি আমরা অভিযান না চালাতাম তাহলে বেপরোয়াভাবে বাড়তো। চালের দাম নিম্নগতি হয়েছে। কুষ্টিয়ার বাজারে কমেছে। প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনিয়ম করার জন্য জেল-জরিমানা হচ্ছে। অনিয়ম করলে লাইসেন্স বাতিল হবে, মিল বন্ধ হবে।

মন্ত্রী সভায় উপস্থিত চালকলমালিকদের বলেন, আপনারা প্রতিযোগিতা করে ধান কেনা বন্ধ করেন। দেখবেন, ধানের দাম ব্যবসায়ীরা কমিয়ে দেবেন। ধান তো ভোক্তারা কেনে না। তখন চালের দামও নিম্নমুখী হয়ে যাবে। চালের দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে সরকার শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করবে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন, বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদ প্রমুখ।

কুষ্টিয়া উপজেলায় খাজানগর মোকামে পরিদর্শন করেন খাদ্যমন্ত্রী

এর আগে, খাদ্যমন্ত্রী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার পাঁচটি অটো রাইস মিল পরিদর্শনে যান। খাদ্যমন্ত্রী প্রথমে দেশ অ্যাগ্রো লিমিটেডে যান। তিনি মিলমালিক আবদুল খালেককে সঙ্গে নিয়ে গুদাম ঘুরে দেখেন। আবদুল খালেকের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘দুই বছর আগে আপনার মিলে এসেছিলাম। আবারও আসলাম’। তখন খালেক বলেন, ‘জানি স্যার, সেই ভয়ও আছে। আপনি যা বলবেন তাই মেনে নেব।’

এরপর মন্ত্রী সুবর্ণা অটো রাইস মিলে যান। সেখানে লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে ১৫০ টন গম মজুত রাখার দায়ে মালিক জিন্নাহ আলমকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। ওই গমের গুদাম সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া, আরেক মিলে গুদাম ভাড়া নিয়ে ধান মজুত করায় ওই গুদাম সিলগালা করে দেন। পাশেই স্বর্ণা অটো রাইস মিলে গিয়ে ধানের প্রচুর মজুত দেখতে পান মন্ত্রী। মজুতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এরপর তিনি রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডে যান। সেখানে মালিক আবদুর রশিদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরিদর্শনের সময় মন্ত্রী কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনকে ভর্ৎসনা করেন। তিনি খাদ্য নিয়ন্ত্রকে বলেন, ‘এসব অনিয়ম কেন এত দিন চোখে পড়েনি। তোমার কাজ আমাকে এসে করতে হচ্ছে।’ পরে বেলা সাড়ে তিনটায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভা করেন মন্ত্রী। বেলা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টা চলে এ সভা। 

সভায় মিলমালিকদের উদ্দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, চালের দাম বাড়া কাম্য নয়। দেশে খাদ্যঘাটতি নেই। সরবরাহ রয়েছে প্রচুর। তারপরও কী এমন হলো, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে হঠাৎ দাম দুই থেকে সাত টাকা প্রতি কেজিতে বেড়ে গেল?

সভায় দেশ অ্যাগ্রো রাইস মিলের মালিক আবদুল খালেক বলেন, সিন্ডিকেট কারা করছে, এর সঠিক তদন্ত করে তাদের তালিকা হওয়া দরকার। তাতে যদি আমার নামও আসে সমস্যা নেই। তবে করপোরেট ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি ধান কিনে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

জবাবে মন্ত্রী বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীদের ধরা হয়। মামলা হয়। তাদের লাইসেন্স বাতিল করলে তখন কার দোষ দেবেন? এসব বলে আমাকে উত্তেজিত করবেন না। আর তাদের চাল তো ধনীরা নেয়।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের বস্তায় মিলগেটে দাম কত, তা লিখতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে উৎপাদনের তারিখও। সেটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর দেখাতে হবে। নতুন আইন করা হয়েছে। দ্রুত কার্যকর হবে। এ আইন কার্যকর হলে মিনিকেট নামের কোনও ধান-চাল থাকবে না। চালের দাম বর্তমানে জেলা প্রশাসন যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে হবে। কোনভাবেই বাড়ানো যাবে না।

কাঞ্চন/মাসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়