ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

ভোলায় খাঁচায় মাছ চাষে সফলতা 

ভোলা সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ৯ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৮:১৫, ৯ মার্চ ২০২৪
ভোলায় খাঁচায় মাছ চাষে সফলতা 

ভোলায় মুক্ত জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সফলতা পেয়েছে সদর উপজেলার চর স্যামাইয়া এলাকার চাষিরা। অল্প পূঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছে চাষিরা। পুকুরের চেয়ে নদীতে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মাছের স্বাদও বেশি হয়। বাজারে এ মাছের অধিক চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে।

সদর উপজেলার শান্তির হাট ব্রিজ সংলগ্ন চরস্যামাইয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীতে ভাসছে সারি সারি মাছের খাঁচা। নদীর প্রবাহমান পানিতে গড়ে উঠেছে ভাসমান মাছ চাষ প্রকল্প। চরস্যামাইয়া গ্রামের ২৫ জন চাষি এনজিও থেকে বিনামূল্যে মাছের পোনা, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে নদীতে ভাসমান খাঁচা তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে ২৫টি খাঁচা দিয়ে শুরু করলেও এখন তাদের খাঁচার সংখ্যা ৩৫০টিরও বেশি। ড্রামের ওপর লোহার পাইপ ও জাল দিয়ে তৈরি প্রতিটি খাঁচায় ছাড়া হয় মনোসেক্স তেলাপিয়া ও পাঙ্গাসের পোনা। 

খাঁচায় মাছ চাষি মো. সোহাগ জানান, কেজিতে ৩০-৩৫টি মাছের পোনা হয়, এমন ৪০-৫০ কেজি মাছ একসঙ্গে চাষ করা যায় একটি খাঁচায়। ২ থেকে ৪ মাসের মধ্যে ওই মাছ প্রতিটি ৫০০ গ্রাম ওজনের হয় এবং তা বাজারজাত উপযোগী হয়।

এ সময় তিনি আরও জানান, মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত সময়ে একজন চাষির প্রত্যেক খাঁচায় ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এ মাছ  কেজি প্রতি ২৪০-২৫০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হয়। যেখানে পুকুরে চাষকৃত মাছের তুলনায় কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা বেশি দাম পাওয়া যায়। এতে ১২-১৩ হাজার টাকা লাভ হয়।

এ বিষয়ে আরেক মাছচাষি রফিক মাঝি বলেন, মুক্ত পানিতে এ চাষ পদ্ধতিতে মাছের খাবারের চাহিদাও কম। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে অল্প পরিমাণে খাবার দিলে হয়। এ চাষে মাছের রোগ বালাই নেই বললে চলে। এতে বাড়তি খরচও করা লাগে না। পুকুরের আবদ্ধ পানিতে মাছ চাষে যেখানে ১ বছর সময় লাগে মাছ বিক্রি উপযোগী হতে, সেখানে খাঁচায় চাষকৃত মাছ ২-৪ মাসে বিক্রি উপযোগী হয়।

আরেকজন মাছ চাষি হারেছ মাঝির সঙ্গে কথা হলে তিনি তিনি জানান, স্বল্প সময়ে অধিক লাভ পাওয়ায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে তারা সন্তুষ্ট। স্বাদ বেশি হওয়ায় বাজারজাত করতে তাদের বেগ পেতে হয় না। মাছ ব্যবসায়ীরা বাড়ি এসে মাছ কিনে নিয়ে যায়।

এ জেলায় এ মাছ চাষ পদ্ধতি মূলত গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম চালু হয়। এ বিষয়ে গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার টেকনিক্যাল মৎস্য অফিসার আরিফুজ্জামান জানান, পিকেএসএফের অর্থায়নে ও এই সংস্থার সহযোগিতায় ভোলার তেঁতুলিয়া নদীতে খাঁচায় মাচ চাষের জন্য বেকার যুবকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৫টি খাঁচা দিয়ে শুরু করলেও এখন জেলায় ৩৫০-৪০০টি ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ভোলা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এফএম নাজমুস সালেহীন জানান, খাঁচায় মাছ চাষের মৎস্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প ছিল। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করায় বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও শুরু হয়। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং সেই নীতিমালা অনুযায়ী এখন সর্বত্র খাঁচায় মাছ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।

মলয়/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়