ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ড্রেজিং চললেও বাড়ে না নদীর গভীরতা, ভাটায় ফেরি বন্ধ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৮ মার্চ ২০২৪  
ড্রেজিং চললেও বাড়ে না নদীর গভীরতা, ভাটায় ফেরি বন্ধ

নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বছরের পর বছর চলছে ড্রেজিং (খনন) কাজ। এরপরও বাড়ছে না নদীর গভীরতা। ফলে নদীতে ভাটা পড়লে চলাচল বন্ধ থাকে ফেরি। শুধু জোয়ারের সময় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

দিনের বেশিরভাগ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে অপেক্ষমাণ শত যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েছে গাড়ি চালকরা। এমন চিত্র লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাটে।

ফেরিঘাট সংশ্লিষ্টরা জানান, মজুচৌধুরীর থেকে ভোলার ইলিশা ঘাটে প্রতিদিন ৫টি ফেরি চলাচল করে। ফেরিগুলো মজুচৌধুরীর হাট ঘাট থেকে রহমতখালী চ্যানেল পাড়ি দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে ভোলার ইলিশা ঘাটে যায়। কিন্তু মজুচৌধুরীর হাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রহমতখালী চ্যানেল প্রতিনিয়ত নাব্যতা সংকটের মধ্যে পড়ে থাকে। সংকট কাটাতে চ্যানেলে বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে ড্রেজিং প্রকল্প চলমান থাকলেও বাড়ছে না নদীর গভীরতা। ফলে ড্রেজিং প্রকল্প কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ চলাচলকারী যানবাহন চালকদের।

লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর-ভোলা রুটে প্রতিদিন যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী যানবাহনের প্রচুর চাপ থাকে। ঢাকা এবং চট্রগ্রাম থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী কয়েকশত যানবাহন এ রুট দিয়ে চলাচল করে। ফেরি দিয়ে এসব যানবাহন পারাপার করা হয়। 

নদীর পানির গভীরতা না থাকায় এসব যানবাহনগুলো সহজে এবং সঠিক সময়ে পারপার হতে পারছে না। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি লোকসানের কবলে পড়ার কথা জানান গাড়ির চালকেরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যানবাহনের চাপ আরও বাড়তে পারে বলে জানান ঘাট সংশ্লিষ্টরা। 

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০টা দিকে মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলগামী অত্যন্ত দেড় শতাধিক গাড়ি ঘাটে অপেক্ষমাণ আছে। ওই সময়ে নদীতে ভাটা চলছিল। তাই ফেরিঘাটে তিনটি ফেরিকে যানবাহন নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। দুপুর ২টার পর নদীতে জোয়ারের পানি ঢুকার পর একের পর এক ফেরিগুলোকে ভোলার ইলিশা ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। 

মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাটে অপেক্ষমাণ ট্রাক চালক জামাল হোসেন বলেন, ‘চট্রগ্রাম থেকে মালামাল নিয়ে ভোলার উদ্দেশ্য যেতে এ ঘাটে চার দিন আগে এসে বসে আছি। নদীতে পানির গভীরতা না থাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তাই আমাদের সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লাগে।’ 

একই কথা জানিয়ে ট্রাক চালক মো. মোন্তাসির রহমান বলেন, ‘এ রুট দিয়ে আমাকে চলাচল করতে হয়। নদীর গভীরতা বাড়ানের জন্য প্রতিনিয়ত ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান দেখে আসছি। কিন্তু কখনো গভীরতা বাড়তে দেখি না। নদীর নাব্যতা সংকট কখনো দূর হয় না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ঘাটে বসে থাকায় আমাদের সময় এবং অর্থ লোকসান হচ্ছে। আমাদের দুর্ভোগের মধ্যেও পড়তে হয়।’  

ফেরি কৃষাণীর মাষ্টার মো. রাসেল বলেন, ‘ফেরিতে গাড়ি লোড দিয়ে বসে আছি। কিন্তু নদীতে ভাটা থাকায় ভোলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে পারছি না। জোয়ার শুরু হলে ছেড়ে যাব। প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।’  

তিনি বলেন, ‘এ মৌসুমে নদীতে পানির গভীরতা কম থাকে। বিশেষ করে মজুচৌধুরীরহাটের রহমতখালী চ্যানেলে পানি থাকে না। ভাটায় একেবারে পানি কমে যায়, জোয়ারের সময় পানি কিছুটা বাড়ে। নাব্যতা বাড়াতে চ্যানেলে খনন কাজ চললেও গভীরতা বাড়ে না। ফলে দিনের অর্ধেক সময় আমাদের জোয়ারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয়।’  

লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. কাউছার রাইজিংবিডিকে বলেন, এ রুটে ফেরি কৃষাণী, কনচাঁপা, কাবেরী, কুসুমকলী ও সুফিয়া কামাল চলাচল করছে। নদীতে পানির গভীরতা কম থাকায় যানবাহন পারাপার করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন এখন ৮০ থেকে ৯০টি গাড়ি পারাপার করা যাচ্ছে। কিন্তু নাব্যতা সংকট না থাকলে দ্বিগুণ যানবাহন পারাপার করা যেত। 

তিনি জানান, সারা বছরই এ রুটে নাব্যতা সংকট থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে রহমতখালী চ্যানেলসহ মেঘনা নদীতে পানি কম থাকে। তবে নদীতে ফেরি চালানো সম্ভব হলেও ভাটার সময় রহমতখালী চ্যানেলে ফেরি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জোয়ার আসলে চলাচল স্বাভাবিক হয়।
 

জাহাঙ্গীর/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়