ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

কৃষি অফিস থেকে কৃষককে বের করে দেওয়ার অভিযোগ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০১, ২ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:১০, ২ এপ্রিল ২০২৪
কৃষি অফিস থেকে কৃষককে বের করে দেওয়ার অভিযোগ

ভুক্তভোগী কৃষক ফজলুর রহমান।

পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধান। এর প্রতিকারের পরামর্শ নিতে কৃষক ফজলুর রহমান (৬৫) এক গুচ্ছ ধান নিয়ে কৃষি অফিসে গেলে তাকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষক ফজলুর রহমানের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া দূরে থাক; উপরন্তু কৃষি কর্মকর্তারা তাকে অফিস থেকে গালিগালাজ করে বের করে দিয়েছেন। ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছর ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে তার কচি ধান মরে যাচ্ছে। এতে তিনি খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থেকে কৃষি ও কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা থাকলেও তারা মাঠে যান না। তাই সকালে বাধ্য হয়ে এক গুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যান।

এসময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজনকে বিষয়টি জানান। কৃষক ফজলুর রহমান তার ধানগুলোর ছবি তুলে রাখার কথা বলেন এবং জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের মোবাইল নম্বর চান। এতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন ওই কৃষি কর্মকর্তা। ফজলুর রহমানের সাথে খারাপ আচরণ করে বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দেই। আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে। যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম।’

এসময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগ দেন অফিসের অন্য স্টাফরাও। এক পর্যায়ে কৃষক ফজলুর রহমানকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। চোখের পানি মুছতে মুছতে অফিস থেকে বের হয়ে যান ফজলুর রহমান।

উপজেলা চত্বরে ওই কৃষক এ ঘটনা দুই সাংবাদিককে জানান। তারা ফজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় কৃষি অফিসে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা কৃষকের এই অভিযোগের বিষয়ে জানান। এসময় সাংবাদিকদের সামনেই রাজিয়া তরফদার ওই কৃষকের সাথে ধমকের স্বরে কথা বলেন এবং আচরণ ঠিক হয়নি বলে তার দিকেই অভিযোগ তোলেন এবং ইংরেজীতে নানা বুলি আওরান। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের ওপরও চড়াও হন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে অফিসিয়াল বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকের অভিযোগ শুনেছি। যদি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার জেলার দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম ফয়েজ উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি নিজে ঠিক মতো অফিস করেন না। যে কারণে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে না গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এছাড়া সার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ঘটনা জানার পর এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিআহ নুর আহমেদ বলেন, কৃষি অফিসের দায়িত্বই হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা। সেখানে কৃষকের অভিযোগের প্রতিকার না করে অফিসের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বোরো খেত দেখতে বুধবার ঘটনাস্থলে জেলা থেকে একজন কর্মকর্তা পাঠানো হবে।

চন্দন/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়