ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

প্রস্তুত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া

থাকছে ৪ স্তরের নিরাপত্তা, জামাত শুরু সকাল ১০টায়

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ৭ এপ্রিল ২০২৪  
থাকছে ৪ স্তরের নিরাপত্তা, জামাত শুরু সকাল ১০টায়

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। (ছবি- সংগৃহীত)

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবারও আয়োজন করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত। এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। ঈদের জামাত আয়োজন উপলক্ষে শোলাকিয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে সব আয়োজন। ঈদ মানেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত। এই জামাত কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে ঈদের পাশাপাশি অন্যরকম আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে ধরা দেয়। বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করলে অশেষ সোওয়াব পাওয়া যায়; এমন বিশ্বাস থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় যান। তাই লাখো মুসল্লিকে বরণ করে নিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিন-রাতের পরিশ্রমে নামাজের উপযোগী হয়ে উঠেছে এই ঈদগাহ ময়দান। আয়োজনের তোড়জোড় দেখে খুশি এলাকাবাসীও। তবে মুসল্লিরা এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পরিধি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন জোরেশোরে।

শোলাকিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এবারের জামাত নিয়ে শোলাকিয়া মাঠের ৪৭টি জামাতের সাক্ষী হতে যাচ্ছি। ছোট থেকেই এ মাঠে জামাতে অংশ নিয়েছি। যতই দিন যাচ্ছে এ মাঠে ঈদ উল ফিতরে মুসল্লিদের সংখ‌্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অত‌‌্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সে অনুপাতে মানুষের জায়গা এ মাঠে নেই। তাই মুসুল্লিরা মাঠের পাশের রাস্তায় জামাতে অংশ নেয়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে মাঠের পরিধি বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।

তাড়াইল উপজেলার আড়াইউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন কবির। প্রায় ২০ বছর যাবত এ মাঠে ঈদের জামাত আদায় করছেন। এবার তার বাড়িতে ঢাকা থেকে আত্মীয়-স্বজনরা এসেছেন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতে। তাই তিনি আজ এসেছিলেন মাঠের প্রস্তুতি দেখতে। প্রস্তুতি দেখে উনি খুব খুশি। তিনি আশা করছেন, প্রতিবারেই মতো এবারও ৪ থেকে ৫ লাখ মুসল্লি এ মাঠের জামাতে অংশ নিবেন।

মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়াল রঙ করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।

জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবারও নিরাপত্তাকে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সবধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা। আগত মুসল্লিরা নিরাপত্তার স্বার্থে ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে ছাতা আনার বিষয়টি আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ লাইনে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দু’টি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায় এবং কিশোরগঞ্জে পৌঁছাবে সকাল ৮টায়। আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ভৈরবে পৌঁছাবে বেলা ২টায়।
শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ৬টায় এবং কিশোরগঞ্জে পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সাল থেকে আমরা সবসময় বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে আসছি। এবার আগের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র‌্যাব ব্যবহার করবে দু’টি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে বাইনোকুলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও থাকবে ফায়ার সার্ভিস ও ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। বোম ডিসপোজাল টিম ঢাকা থেকে আসবে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকেও কাজ করবে পুলিশের একটি টিম।

ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪’র অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা, দুটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এজন্য শতাধিক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে ইতোমধ‌্যে মাঠ সৌন্দর্য‌্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি এবারো লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে শোলাকিয়ায়।

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে ছোড়া হয় শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি। নামাজের ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সঙ্কেত দেওয়া হয়।

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

রুমন/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ