ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

লিবিয়ায় অপহৃত ৪ শ্রমিককে জীবিত ফেরত চান স্বজনরা 

লালমনিরহাট সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ৭ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:৪০, ৭ এপ্রিল ২০২৪
লিবিয়ায় অপহৃত ৪ শ্রমিককে জীবিত ফেরত চান স্বজনরা 

ছেলে আল আমিনের অপহরণের খবর জানার পর থেকে কান্না থামছে না মা আলেয়া বেগমের

ভাগ্য বদলের জন্য জমিজমা বিক্রি করে লিবিয়ায় পাড়ি জমান লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের চার যুবক। সেখানে তারা অপহরণের শিকার হন। তাদের মুক্তির জন্য টাকা চেয়ে বাড়িতে বার্তা পাঠিয়েছে অপহরণ চক্রের সদস্যরা। মুক্তিপণ না পাওয়ায় অপহৃতদের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারগুলো।

আপহৃতদের মধ্যে রয়েছেন- লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আল আমিন (২৩), জয়নাল আবেদিনের মেয়ে জামাই ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙার ইদ্রিস আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪০), রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে আল আমিন (২২) এবং তার খালাতো ভাই ও পঞ্চগ্রামের রামরাম গ্রামের শাহিনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৪)। তারা লিবিয়ার বেনগাজিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।

অপহৃত যুবকদের পরিবার জানায়, ভাগ্য বদলের কথা চিন্তা করে প্রবাসী মিজানের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান ওই চার যুবক। লিবিয়ায় গিয়ে শুরুতে মিজানের সঙ্গে কাজ করতেন তারা। চুক্তি অনুযায়ী টাকা না মেলায় ৪ জনই আলাদা কাজ শুরু করেন। সবকিছু  ঠিকঠাক চলছিল। পরে অপহরণ হন চার যুবক। 

অপহৃত আল আমিনের বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, তিন বছর আগে জমিজমা বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে একমাত্র ছেলে আল আমিনকে লিবিয়ায় পাঠাই। ছেলের সঙ্গে মেয়ে জামাই হাফিজুল ইসলামও লিবিয়ায় যান। তিন বছরে কোনো সমস্যা না হলেও চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল ৮টায় নাম না জানা এক ব্যক্তি ইমো নম্বরে ফোন করেন। তিনি জানান, আমার ছেলে আল আমিন ও জামাই হাফিজুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তির জন্য এক লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে দুই জনকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। ছেলে ও মেয়ে জামাই অপহরণ হয়েছেন এ কথা জানার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আল আমিনের মা আলেয়া বেগম। 

হাফিজুলের স্ত্রী জয়নব বেগম বলেন, আমার স্বামী ও আমার একমাত্র ভাই লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছে। মুক্তিপণ না দিলে স্বামী ও ভাইকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। কী করবো কিছু বুঝতেছি না। আমি আমার স্বামী ও ভাইকে জীবিত ফেরত চাই।

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ভীম শর্মা গ্রামের আল আমিন দুই বছর আগে লিবিয়ায় কাজে যান। আল আমিনের বড় ভাই লিটন মিয়া বলেন, গত ১১ মার্চ সকাল আনুমানিক ৭টা ৫১ মিনিটে আমার নম্বরে লিবিয়া থেকে ফোন আসে। জানানো হয়, আমার ভাই আল আমিন, খালাতো ভাই রাকিবুল, সিন্দুরিয়া গ্রামের আরেক আল আমিন, তার ভগ্নিপতি হাফিজুলকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদেরকে জীবিত দেখতে চাইলে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। আইনের আশ্রয় নেওয়া হলে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলারও হুমকি দেয়। আমি আমার ভাইকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে চাই।

তিনি আরও বলেন, অপহরণের পেছনে পঞ্চগ্রামের সিন্দুরিয়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফের লিবিয়াপ্রবাসী ছেলে মিজানুর রহমান, একই ইউনিয়নের রামরাম গ্রামের সামসুল হকের ছেলে লিবিয়াপ্রবাসী মো. নাজমুল হুদা (২৩) এবং একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে লিবিয়াপ্রবাসী মো. সুলতান (৩২) কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকতে পারেন। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের বাবা আবদুল মোন্নাফ জানান, তার ছেলে অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়। সব অভিযোগ মিথ্যা বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

অনলাইনের মাধ্যমে অভিযুক্ত মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপহরণের বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। তিনি এ ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেন। মিজান বলেন, লিবিয়ায় আসার পর আমার সঙ্গে কাজ শুরু করলেও তারা (অপহৃত যুবকরা) সবাই আলাদা কাজ করে। তিনিও অপহরণ হওয়া চার যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় প্রবাসী মিজানকে আসামী করে লালমনিরহাট সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে অপহরণের শিকার যুবকদের স্বজনরা। লিখিত অভিযোগ এখনো হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক

জামাল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়