ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

২ টাকায় ব্যাগভর্তি পণ্য পেলেন ৪০০ পরিবার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ৮ এপ্রিল ২০২৪  
২ টাকায় ব্যাগভর্তি পণ্য পেলেন ৪০০ পরিবার

স্বামী হারা প্রতিবন্ধী রোজিনা আক্তার (৫০) কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশায় ছোট বোন রোকেয়ার কাছে থাকেন। টুকটাক কাজকর্ম করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে দুই বোনের সংসার। মাঝে মধ্যে মানুষের কাছ থেকে ধারও নিতে হয় টাকা। এবার ঈদ চলে এলেও এখনো তারা করতে পারেননি বাজার।  হতদরিদ্র এই দুই নারীকে সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে আমন্ত্রণ জানানো হয় ২ টাকার ঈদ আনন্দ বাজারে। সেখান থেকে তারা ২টাকার বিনিময়ে ব্যাগভর্তি বাজার করেছেন। 

দুই টাকার বিনিময়ে ঈদ আনন্দ বাজারে দুই ধরণের চাল, তেল, দুধ, সেমাই, লবন, চিনি ও পরণের নতুন শাড়ি-লুঙ্গিসহ ১১ প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মিলেছে। ঈদসহ অন্তত এক সপ্তাহের খাবার পেয়ে দুই বোনের মলিনমুখে অনেকদিন পর হাসি ফুটেছে।

রোজিনা এবং রোকেয়ার মতো যারা উচ্চমূল্যের বাজারে ঈদের একেবারে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কিনতে পারছিলেন না তাদের কথা ভেবে আয়োজন করা হয় এই ঈদ আনন্দ বাজারের। কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এনায়েত করিম অমি এই বাজারের উদ্যোক্তা। তাকে সহযোগিতা করেছে আব্দুল করিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।

কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়ার বিন্নগাঁও এলাকায় তাঁর বাসার সামনে একটি ভবনের নিচে খোলা জায়গায় এ ব্যতিক্রমধর্মী বাজারের আয়োজনটি করা হয়। কোনো ধরণের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দুপুর দেড়টার দিকে অভাবী লোকজনের জন্য খুলে দেওয়া হয় বাজারটি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শুরুতেই লোকজন বাজারের সামনে টেবিলে গিয়ে ২টাকা করে পরিশোধ করছেন। পরে তাদের হাতে একটি করে ব্যাগ ধরিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এরপর তাদের মূল বাজারে প্রবেশে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। সবাই নিজহাতে বিভিন্ন টেবিলে সাজানো পণ্যগুলো ব্যাগে ভরে চলে যাচ্ছেন। আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে বাজারের কার্যক্রম।

শহরতলীর চংশোলাকিয়া গ্রামের হাদিস মিয়া বলেন, ২টাকায় এখন কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু, আজ ২টাকা দিয়ে ব্যাগভরে বাজার করেছেন তারা। ঈদের আগে এ সহযোগিতাটুকু কাজে লাগবে। 

আয়োজকরা জানান, প্রথমে স্বেচ্ছাসেবকরা শহরের বিভিন্ন এলাকার গরিব লোকদের বাছাই করেন। পরে তাদের ২টাকার বাজারের আমন্ত্রণ জানানো হয়। যারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সবাই বাজারে এসে পণ্য কিনেছেন। মোটামুটি আনন্দঘন পরিবেশে চলে কার্যক্রম। ৪০০ নারী-পুরুষ বাজার থেকে পণ্য কেনার সুবিধা পান।

ঈদ আনন্দ বাজারের আয়োজক এনায়েত করিম অমি বলেন, উচ্চমূল্যের বাজারে অনেক গরিব পরিবার আছেন যারা প্রয়োজনীয় বাজারটুকু করতে পারেননি। মূলত তাদের কথা ভেবে ২টাকার বাজারের আয়োজন। এটি দানদক্ষিণার কোনো বাজার নয়, লোকজন জিনিসপত্র এখান থেকে কিনে নিয়েছেন। আমার আহ্বান থাকবে এ ধরণের উদ্যোগ যেন ছড়িয়ে পড়ে, সামর্থবানরা যদি জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশের দরিদ্র লোকজন অনেকটাই স্বস্তি পাবে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে উপস্থিত প্রতিটি লোককে তার পরিবারের জন্য এক কেজি পোলাও চাল, তিন কেজি সাধারণ চাল, এক প্যাকেট সেমাই, এক কেজি চিনি, আধা লিটার সোয়াবিন তেল, এক কেজি ডাল, এক প্যাকেট লবন, এক প্যাকেট দুধ, একটি সাবান, একটি শ্যাম্পু ও নারীদের জন্য একটি নতুন শাড়ি আর পুরুষদের জন্য একটি করে লুঙ্গি রাখা হয়।

রুমন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়