ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

মারধরে নয়, চালক-সুপারভাইজারের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়: পুলিশ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৩:১৭, ১০ এপ্রিল ২০২৪
মারধরে নয়, চালক-সুপারভাইজারের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়: পুলিশ

বাড়তি ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে আশুলিয়ায় যাত্রীদের মারধরে চালক ও সুপারভাইজারের মৃত্যু হয়নি। অপর একটি বাসের চাপায় তারা মারা গেছেন। নিজেকে বাঁচাতে মারধরের গল্পটি সাজিয়েছিলেন বাসের হেলপার দাবি করা আব্দুর রহমান। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বাসের হেলপারের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানিয়েছে পুলিশ। 

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত সোমবার (৮ এপ্রিল) আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকার নবীনগর-চন্দ্রামুখী মহাসড়কের লেনে ইতিহাস পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একটি দূরপাল্লার বাস পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর দাঁড়িয়ে থাকা বাসের গেটে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। একই সঙ্গে গাড়িটিতে থাকা যাত্রীদেরকেও নামতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর আহত দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে ওই ফুটেজে।

প্রত্যক্ষদর্শী সুমন শেখ বলেন, আমি আমার পরিবারের লোকজনকে গাড়িতে তুলে দিতে আসি। সেসময় দেখতে পাই ইতিহাস বাসের গেটে দুইজন ঝগড়া ও হাতাহাতি করছেন। একটি বড় বাস তাদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। সেসময় বাসের ড্রাইভারের সিটে থাকা কালো গেঞ্জি পড়া এক ব্যক্তি জানালা দিয়ে লাফ পালিয়ে যান। পরে আহত দুই জনকে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যান।

নিহতদের শরীরে থাকা আঘাতের চিহৃ, সিসি টিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যসহ প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয় পুলিশের। ঘটনার সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

নিজেকে ওই বাসের হেলপার দাবি করা আব্দুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। তখন ড্রাইভার সোহেল রানা বাবু আমাকে গাড়ি চালাতে বলে ঝামেলা মেটানোর জন্য নিজেই গেটের কাছে যান। এসময় সোহেল ও সুপারভাইজার হৃদয় দুই জন মিলে যাত্রীদের ডাক ছিল। পাশাপাশি বাড়তি ভাড়া নিয়েও ভেতরে যাত্রীর সঙ্গে তর্ক-বির্তকও চলছিল। এক পর্যায়ে বাসে গেটের পাশ দিয়ে আরেকটি বাস যায়। সেসময় গেটে থাকা বাবু ও হৃদয়কে ওই বাসটি ধাক্কা দেয়। ফলে ওই দুইজন রাস্তায় পড়ে যান। আমি ভয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে পালিয়ে যাই। একটু পরে আবার ফিরে এসে অন্যদের সঙ্গে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই।

নিহত সুপারভাইজার হৃদয়ের ভাই আতিকুর রহমান বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখে ও লোকজনের কথা শুনে মারামারি হয়েছে কিনা তেমন বুঝতে পারেনি। শুনেছি গাড়ি ঠেলায় তারা মারা গেছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই। যারাই জড়িত হোক না কেন তারা যেন শাস্তি পায়। 

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, আব্দুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। আমরা যেটা পেয়েছি, প্রথমত সাংবাদিকদের কাছে তার যে বক্তব্য বা পুলিশ অফিসারের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি তাতে আমাদের সন্দেহ হয়। কেননা তার বক্তব্য অনুযায়ী ১০/১২ কিংবা ১৫ জন ব্যক্তি মিলে বাস থেকে নামিয়ে দুই জনকে পিটিয়ে আহত করেন। আহত করার পর তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মৃত্যু হলে পুলিশ যখন সুরতহাল করে আরও অফিসাররা যখন সেখানে যায় তখন ইনজুরি মার্ক যে রকম থাকার কথা সেই মার্ক বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না।  একজনের বুকে এবং অপর জনের মাথার দিকে খানিকটা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। কিন্তু ১০ থেকে ১২ জন মিলে কাউকে আঘাত করলে কিংবা পেটালে যেরকম ইনজুরি হওয়ার কথা সে রকমটি পরিলক্ষিত না হলে আমাদের সন্দেহ হয়। 

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমরা একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাই যিনি আমাদেরকে জানান, তারা (নিহত) দুই বাসের মাঝখানে চাপ খেয়েছেন। আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের মৃত্য হয়। আমাদের হাইওয়ে পুলিশের র‍্যাকার কর্মকর্তা ওই বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে গিয়েছিলেন তার বক্তব্যেও সেখানে মারামারি হয়েছে এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্থাৎ বাসে যিনি ছিলেন তিনি নিজেকে বাসের হেলপার পরিচয় দিয়ে এই ঘটনাগুলি বলেছিলেন তার সঙ্গে আবারও আমরা কথা বলি। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি প্রাথমিকভাবে এরকম বলেন যে, আসলে স্টিয়ারিং এ তিনি নিজেই ছিলেন। ওই সময় তিনি নিজেই বাস চালাচ্ছিলেন। বাস চালানোর এক পর্যায়ে অন্য আরেকটি পরিবহন ‘মা-বাবার দোয়া’ এরকম আমরা ভিডিও ফুটেজে পরবর্তীতে দেখেছি ইতিহাস পরিবহনটিকে ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা করে। বাসটি যখন আগে যাচ্ছিল তখন সে (হেলপার) আগে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করে বাম দিকে গাড়িটি চাপান। তখন দুই জনের একজন রাস্তায় ছিল অর্থাৎ বাসের নিচে ছিল আরেকজন মনে হয় বাসের গেটের দিকে ছিল। বাসটি যখন জরুরি ভিত্তিতে বামে চাপাতে যায় তখন ওই দুইজন ব্যক্তির অপর বাসের সাথে ধাক্কা লাগে। পরবর্তী পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিকভাবে তদন্তে আমরা এতোটুকু পেয়েছি। 

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। রিপোর্ট ডাক্তাররা দেবেন এবং আমাদের তদন্ত আরও বাকি রয়েছে। সব কিছু মিলে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো আসলে কি ঘটেছিল।

সাব্বির/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়