ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

সেই আদুরী পেলেন ঈদের উপহার

পটুয়াখালী (উপকূল) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১০:৪০, ১৪ এপ্রিল ২০২৪
সেই আদুরী পেলেন ঈদের উপহার

স্বামী ইমরানের সঙ্গে আদুরী বেগম

২০১৩ সালে ঢাকার পল্লবীতে গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সংবাদপত্রের শিরোনাম হন আদুরী বেগম। এ সময় গৃহকর্তী নওরীন জাহানের তীব্র রোষের শিকার হয় সে। নির্যাতনের পর মারা গেছে ভেবে আদুরীর ক্ষত-বিক্ষত দেহ রাতের অন্ধকারে পল্লবীর একটি ডাস্টবিনে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে ডাস্টবিন থেকে আদুরীকে উদ্ধার করেন লিলি আক্তার নামে এক পথচারী। পরে খবর পেয়ে পল্লবী থানা পুলিশ আদুরীকে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে তার চিকিৎসা চলে। গঠন করা হয় মেডিক্যাল বোর্ড। এক মাস চিকিৎসা শেষে আদুরী বাড়ি ফিরে আসে। 

ঘটনার ১১ বছর পর চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি ডটকম। প্রতিবেদনে উঠে আসে আদুরীর আক্ষেপের কথা। তার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আদুরী বলেন, ‘কোনো কালেই আমার কপালে সুখ জুটলো না! ছোটবেলায় বাবাকে হারালাম। ঢাকায় পরের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম। মা-ভাই দেখেশুনে বিয়ে দিলো। সেখানেও শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন। এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাইয়ের ঘরে থাকি। ঠিকমতো খাবারও পাই না।’

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে আদুরীর মানবেতর জীবনযাপন রাইজিংবিডির সহৃদয় পাঠকের মনে নাড়া দেয়। তিনি যোগাযোগ করেন প্রতিবেদকের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি আদুরী বেগমের ঈদ আনন্দময় করতে উপহার দেন।   

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে আদুরী বেগমের হাতে এসব উপহারসামগ্রী তুলে দেন রাইজিংবিডি ডটকম-এর পটুয়াখালী প্রতিনিধি মো. ইমরান। এ সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

উপহার পেয়ে দুঃখের মাঝেও আনন্দ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আদুরী বেগম ও তার পরিবার। ঈদ উপহার হিসেবে তাকে ১টি শাড়ি, ১টি থ্রি-পিস, সন্তানের জন্য জামা, ২ কেজি সেমাই, ২ কেজি চিনি, ১ কেজি প্যাকেটজাত দুধ, ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল এবং তার স্বামীর জন্য জামা ও লুঙ্গী দেওয়া হয়। 

২০১৩ সালে ঢাকার পল্লবীতে গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন আদুরী বেগম। তখন আদুরী ছোট ছিল। ইস্ত্রি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেওয়া, আগুনে জিহ্বা পুড়িয়ে দেয়া ও ব্লেড দিয়ে হাত-পা কেটে দেওয়ার মতো নির্যাতনও তাকে সইতে হয়েছে। সে বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নির্যাতনে মারা গেছে ভেবে আদুরীকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। সে সময় আদুরীকে নিয়ে রাইজিংবিডি ডটকম সংবাদ প্রকাশ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের ভগ্নিপতি চুন্নু মিয়া ও তাদের আত্মীয় রনিকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন নওরীন জাহান নদী। 

ঘটনার দীর্ঘ ১১ বছর পেরোলেও এখনো আদুরীর শরীরে রয়ে গেছে নির্যাতনের সেই ক্ষতচিহ্ন। সেদিন প্রাণে বেঁচেছেন ঠিকই তবে ভালো নেই আদুরী। শ্বশুর শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে বর্তমানে আদুরী আশ্রিত জীবনযাপন করছেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠীতে। 

আদুরী বেগম বলেন, আমি আর সেই নির্যাতনের কথা মনে করতে চাই না। কারণ সেই কথা মনে উঠলে এখনো চোখে ঘুম আসে না। আমাকে যারা নির্যাতন করেছে নদীসহ আমি তাদের বিচার চাই। বর্তমানে সাগরে তেমন মাছ পড়ে না। তাই এই ঈদে আমরা স্বামী-স্ত্রী কিছুই কিনতে পারিনি। আজ শাড়ি, থ্রি-পিস লুঙ্গিসহ অনেক খাবার সামগ্রী পেলাম। এতে কিছুদিন হয়তো চলে যাবে। এরপর আবার সেই অনিশ্চিত প্রতিদিন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আল্লাহ তার ভালো করুক। 

রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আদুরী বলেন, তবে এখন আমার থাকার জায়গা নেই। ভাইয়ের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি, তাও অনেক ঝামেলা। আমাদের জমি আছে, কেউ একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে দিলে অন্তত শান্তিতে থাকতে পারতাম। 

আদুরীর স্বামী ইমরান হোসেন বলেন, ঈদে কেউ আমাদের উপহার দেবে কখনও ভাবি নাই। যারা আমাদের এই উপহার দিয়েছে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে অনেক অনেক দোয়া করি। আল্লাহ যেন তাদের সবসময় ভালো রাখে।

পড়ুন- আদুরীর আক্ষেপ: কোনো কালেই আমার কপালে সুখ জুটলো না 

মারা গেছে ভেবেই আদুরীকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় গৃহকর্ত্রী

ইমরান/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়