ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে সজীবকে খুন করা হয়েছে, অভিযোগ পরিবারের

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৬, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে সজীবকে খুন করা হয়েছে, অভিযোগ পরিবারের

লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জে দলীয় পদ বাণিজ্যে’র আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা এম সজীব খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) গুলিবিদ্ধ হওয়ার চারদিন পর দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সজীব মারা যায়। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের মা বুলি বেগম।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় ‘বিচার চাই’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো চন্দ্রগঞ্জ এলাকা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ত্রাসীদের হামলা ও গুলিতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এম সজিবের বাড়িতে চলছে স্বজনদের কান্নার রোল। তাদের কান্নায় চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মাত্র পাঁচ মাস বয়সী কন্যা সন্তান জানে না অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে সে এতিম। নিহত সজীব চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে ও চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এ ছাড়া কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের আসন্ন ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তিনি।

নিহতের মা বুলি বেগম ও স্বজনদের দাবি, ছাত্রলীগের পদের জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ছিল নিহত সজিবের। টাকা নিয়ে তাদের মাঝে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে কাজী বাবলু হত্যার হুমকি দিয়েছিল। কাজী বাবলু পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এম সজিবকে নৃশংসভাবে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরও ৩ জন আহত হয়েছেন। 
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ রায়হান ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাতে একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া গ্রামের যৈদের পুকুরপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী সজীব, সাইফুল পাটোয়ারী, মো. রাফি ও সাইফুল ইসলাম জয়েরে উপর অতর্কিত হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে সজীবকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যদের ওপরও গুলি চালানো হয়। হামলাকারীরা মুখোশ পড়া ছিল। পরে আহত অবস্থায় ওই চারজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় সকাল থেকে এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো চন্দ্রগঞ্জ এলাকা। সকাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগের একাংশের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবির আহমেদ, ওয়াহিদুজ্জামান বেগ বাবলু, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিটন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব প্রমুখ। তারা সজিবকে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি করে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। তাছাড়া কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন বক্তারা।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনায় সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে সজীবের মা বুলি বেগম বাদী হয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী বাবলুকে প্রধান করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে আরও ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। একইদিন চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার দ্বিতীয় আসামি চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা জেলা কারাগারে রয়েছেন। অন্যদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

লিটন/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়